আজ খবর (বাংলা), নতুন দিল্লী, ভারত, ০১/০২/২০২২ : আজ প্রথমবার সংসদে পেপারলেস বাজেট পেশ করলেন দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তিনি বলেন। "আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।" ভারতে করোনা সংক্রমণের পরে অর্থনীতিতে যথেষ্ট বৃদ্ধি হয়েছে বলে জানলেন তিনি। তাঁর পেশ করা বাজেটে মূল যে বিষয়গুলি উঠে এল সেগুলি হল -
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, "করোনার পর বৃদ্ধির পথে এগিয়েছে দেশের অর্থনীতি। এই বৃদ্ধিকে ধরে রাখতে হবে। দেশের বিশেষ বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেজ) আইনেও বদল আনা হবে। অর্থনীতির উন্নয়নে লগ্নীতে আরও জোর দেওয়া হবে। মূলধন বিনিয়োগ এখন বেড়ে হয়েছে ৭.৫ লক্ষ কোটি টাকা। রাজ্যগুলির উন্নয়নে আরও আর্থিক সহায়তা করা হবে। জিডিপির ৪% ঋণ নিতে পারবে রাজ্যগুলি।
চলতি আর্থিক বর্ষেই দেশে ই-পাসপোর্ট চালু করা হবে। ডিজিটালাইজেশনের ওপরেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ত্ব দেওয়া হবে। বাজারে ডিজিটাল মুদ্রা ছাড়বে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। গ্রামীণ পরিষেবা চালু করতে এবছরেই স্পেকট্রাম নিলাম করা হবে। এবার থেকে ডিজিটাল সম্পত্তির জন্যেও কর দিতে হবে। জমির বিবরণ ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হবে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জোর দেওয়া হবে। কমিয়ে আনা হবে কার্বন নির্গমন। ক্ষেতে ফসলের গোড়া যাতে না পোড়ানো না হয়, তার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষি ক্ষেত্রে সরঞ্জামের দাম কামানো হবে। কৃষিক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহার বাড়ানো হবে। চাষীদের ফসল কিনতে সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি করা হবে। ফল ও সবজি চাষে উৎসাহ দিতে নতুন প্যাকেজ আনা হবে। সৌরবিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ১৯,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
দেশে ২৫ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। দেশের ৫টি নদীকে যুক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে। ভারত নেট প্রকল্পে জোর দেওয়া হবে। এমএসএমই প্রকল্পে ২.৩৭ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশে ৪টি কোল গ্যাস পাইলট প্রকল্প গড়ে উঠবে। দেশে ৫জি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতায় জোর দেওয়া হবে। জৈব জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে ফেলা হবে। দেশে বৈদ্যুতিক গাড়িকেই উৎসাহ দেওয়া হবে এবং সেই বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি হবে দেশের মধ্যেই। গোটা দেশ জুড়েই বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং চার্জিং স্টেশন গড়ে তোলা হবে. রেলে পিপিপি মডেলকে আরও উৎসাহ দেওয়া হবে। দেশজুড়ে চালু করা হবে ৫জি পরিষেবা। দাম কমতে চলেছে বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের।
কর্পোরেট করের হার ১৮% থেকে কমে ১৫% করা হয়েছে। আয়কর রিটার্নের ত্রুটি দূর করার ক্ষেত্রে সময়সীমা বাড়িয়ে ২ বছর করা হয়েছে। অর্থাৎ আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রে কোনো ভুল থাকলে তা ২ বছরের মধ্যে যেমন সংশোধন করা যাবে, তেমন কিছু বাদ গিয়ে থাকলেও তা ২ বছরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্যে আয়করে ছাড় থাকবে। পেনশনভোগীদের আয়করে আরও ছাড় দেওয়া হবে। কর পরিকাঠামো আরও সরলীকরণ করা হবে। জিএসটিতে এখনও কিছু ত্রুটি রয়ে গিয়েছে, সেগুলি দ্রুত ত্রুটিমুক্ত করা হবে। ব্যক্তিগত কর পরিকাঠামোয় কোনো পরিবর্তন করা হয় নি। যা ছিল তাই রাখা হয়েছে। ইস্পাতের আমদানীর ওপর আমদানী শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, "গত জানুয়ারিতে রেকর্ড জিএসটি আদায় করা হয়েছে। মোট জিএসটি বাবদ ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। স্টার্ট আপের জন্যে একগুচ্ছ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে আরও প্রান্তিক জায়গায় ছড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আসছে ৭৫টি ডিজিটাল ব্যাঙ্ক। করোনার পর মানসিক ব্যাধি রুখতে টেলি মেডিসিনের ওপর জোর দেওয়া হবে। দেশে তৈরি হবে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। সব মন্ত্রকের অভিন্ন বিলিং ব্যবস্থা করা হবে। হীরের আমদানি শুল্ক কমে ৫% করা হচ্ছে। ৫ বছরে ৬০ লক্ষ কর্ম সংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। সড়ক, রেল ও জলপথে পরিবহনের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে। পিএম আবাস যোজনায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্রুত এলআইসির শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও আত্মনির্ভরতায় জোর দেওয়া হবে। ব্যবসার সুবিধার্থে সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেম গড়ে তোলা হবে।"
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বাজেট নিয়ে বলেছেন, "সাধারণ মানুষের জন্যে এই বাজেট শূন্য। এই বাজেটে শুধুমাত্র বড় বড় কথা বলা হয়েছে।" কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, "এই বাজেট হল সাধারণ মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।"