রক্ত দান করছেন স্কুল শিক্ষক বিভাস দাস |
আজ খবর (বাংলা), গঙ্গারামপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ২৭/০১/২০২২ : নিজ বাসস্থান থেকে চল্লিশ কিমি দূরে ছুটে গিয়ে নিজ দেহের বিরল রক্ত দান করে মরণাপন্ন রোগীর প্রাণ বাঁচালেন এক মানবিক শিক্ষক।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বংশীহারী ব্লকের এলাহাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বাঁশপুকুর গ্রামের শরৎ রায়ের স্ত্রী যমুনা রায় ডায়াবেটিস ও রক্তাল্পতায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। মাঝে মাঝেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তাকে রক্ত নিতে হয়। দুই দিন আগেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার ফলে তাঁকে গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি সেকশনে ছয়তলার ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করেন তার ছেলে রবি রায় ও নব রায়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরিক্ষার পরে দেখা যায় রোগীর দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অত্যন্ত কম।
গতকাল বিকেলে ভারপ্রাপ্ত ডাঃ ব্রিজেশ সাহা রোগীর ছেলেদের তাড়াতাড়ি রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। রোগীর রক্তের গ্রুপ বিরল বি-নেগেটিভ হওয়ায় এবং হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে তা মজুত না থাকায় প্রবল দুশ্চিন্তায় হাহাকার করতে থাকেন তাঁর পরিবারের লোকজন। এরপর সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক মারফৎ নব রায় জানতে পারেন বালুরঘাটের বেলতলা পার্ক নিবাসী এক স্কুলশিক্ষক বিভাস দাসের দেহ ঐ বিরল রক্তের অধিকারী এবং তিনি রক্তদানের জন্য যে কেউ ডাকলেই ইতিবাচক সাড়া দিয়ে রক্তের অভাবে মরণাপন্ন রোগীর প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে দূর দূরান্তের হাসপাতালেও ছুটে যান।
সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা ফোনে বিভাস দাসের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন মাত্র কয়েকদিন আগেই তাঁর শেষ রক্তদানের তিন মাস সময় অতিক্রান্ত হয়েছে এবং তিনি রক্তদানের জন্য গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে গিয়েই রক্ত দিতে প্রস্তুত। রক্তের রিকুইজিসন স্লিপ হাতে পেয়ে গতকাল রাতেই বিভাস দাসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রোগীর ছেলে নব রায়। মানবদরদী বিভাসবাবু তা শোনামাত্র এক কথায় রাজী হয়ে জানিয়ে দেন, তিনি পরদিনই গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে পোঁছে যাবেন। সেই মতো তিনি আজ বেলা সাড়ে দশটায় সেখানে গিয়ে নিজ দেহের বিরল বি-নেগেটিভ রক্ত দান করে আসেন।
রক্ত দিয়েই ক্ষান্ত না হয়ে বিভাসবাবু ওয়ার্ডে গিয়ে রোগী যমুনা রায়ের সাথে কথা বলে তাঁকে আশ্বস্তও করে আসেন। অবশেষে এত সহজেই দুষ্প্রাপ্য এই গ্রুপের রক্তের ব্যবস্থা হয়ে যাবার ফলে খুশিতে আত্মহারা তার পরিবার-পরিজন বিভাসবাবুকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে তিনি এর আগে তাঁর দেহের এই বিরল বি-নেগেটিভ রক্তদানের মাধ্যমে বিপন্ন রোগীর জীবন বাঁচাতে ১১০ কিমি দূরে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ছুটে গিয়ে রক্ত দিয়ে এসেছেন। আরো একবার রক্তদানের জন্য ১১০ কিমি দূরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও যেতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি। তার এই পরোপকারী ও মানবসেবামূলক মানসিকতার জন্য জেলাবাসীর কাছে সুপরিচিত ও অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ এই মানবিক স্কুলশিক্ষক বিভাস দাস।