আজ খবর (বাংলা), কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ৩১/০১/২০২২ : আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখ থেকে খুলে যাচ্ছে রাজ্যের স্কুল কলেজগুলি, তবে অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল খুলছে। এছাড়াও ঐ দিন থেকেই খুলে যাচ্ছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, আইটিআই। আজ নবান্নে এই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
করোনা সংক্ৰমন রুখতে রাজ্য সরকার ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত যে বিধি নিষেধ আরোপ করেছিল, সেই বিধি নিষেধ বাড়িয়ে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হল। ১৫ তারিখে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি কেমন থাকে তা খতিয়ে দেখে নিয়ে ফের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বেলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে রাত্রিকালীন বিধিনিষেধ ছিল রাত্রি ১০টা পর্যন্ত, সেটা এবার করে দেওয়া হল রাত্রি ১১ টা পর্যন্ত। অর্থাৎ রাত্রি ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিধি নিষেধ বলবৎ থাকবে। শেষ লোকাল ট্রেন রাত্রি ১০টাতেই ছাড়বে, রাত্রি ১১টার মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে যেতে হবে।
রাজ্যের স্কুল কলেজ খুলে যাচ্ছে আগামী ৩ তারিখ থেকে। তবে আপাতত অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত খোলা হবে রাজ্যের স্কুলগুলি। ৩রা ফেব্রুয়ারি থেকে খুলে যাবে রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও আইটি আই। পঞ্চম শ্রেণী থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত 'পাড়ায় শিক্ষালয়' প্রকল্পের আওতায় থাকবে, যেখানে প্রত্যেক পাড়ায় কোনো একটি জায়গায় পড়ুয়াদের পড়াতে পারবেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। তবে প্রাইমারি ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্যে এখনই স্কুল খুলছে না। রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি আরও খতিয়ে দেখে এই বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নিতে চায় রাজ্য সরকার। আসন্ন সরস্বতী পূজার জন্যে পড়ুয়াদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবার থেকে ৭৫% কর্মী নিয়ে রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলি কাজ করতে পারবে। এতদিন নিয়ম ছিল ৫০% কর্মী নিয়ে কাজ করার। এবার সেটা বাড়িয়ে দেওয়া হল। ৭৫% আসন ভর্তি করে খোলা থাকবে রাজ্যের যাত্রা, থিয়েটার ও সিনেমা হলগুলিও। রেস্তোরাঁ ও বারেও ৭৫% আসনে লোক বসতে পারবে। যে কোনো জায়গায় মিটিং বা বৈঠকের জন্যেও ৭৫% আসনে মানুষ বসতে পারবেন। রাজনৈতিক বৈঠক হলেও পারবেন, তবে রাস্তায় জনসমাগমের ক্ষেত্রে আগের নিয়মই বহাল থাকবে। অনুষ্ঠান ও নিমন্ত্রণ বাড়িতে হল ক্যাপাসিটির (স্ট্যান্ডিং ক্যাপাসিটি) ৭৫% মানুষ থাকতে পারবেন।সুইমিং পুল সহ ক্রীড়াক্ষেত্রেও ছায়ার দেওয়া হয়েছে একই হারে।
দেউচা পাঁচামি নিয়েও আজ সাংবাদিক বৈঠকে সুনির্দিষ্ট বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "প্রাথমিকভাবে ওখানে সরকারের যে ১০০০ একর জমি রয়েছে, সেই জমি দিয়েই কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া যাঁরা ওখানে জমি দেবেন, তাঁদের জমির বদলে জমি, পাটটা, ক্ষতিপূরণ ছাড়াও পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়া হবে। এই ব্যাপারে ইতিমধ্যেই ১৩৯ জন আগ্রহ দেখিয়েছেন রাজ্য সরকারের কাছে।"
এবার থেকে দিল্লী-মুম্বই উড়ানে ছাড় দেওয়া হল। এবার থেকে আর সপ্তাহে তিনদিন নয়, সপ্তাহের প্রত্যেক দিন কলকাতা থেকে নিয়মিত ছাড়বে মুম্বইয়ের উড়ান। তবে ব্যাঙ্গালুরুতে যেহেতু সংক্ৰমন অনেকটা বেশি আছে, তাই ব্যাঙ্গালুরুর উড়ানে ছাড় দেওয়া হয় নি। এছাড়া কলকাতা - লন্ডনের উড়ানেও ছাড় দেওয়া হয়েছে, তবে কলকাতায় অবতরণের পর আরটিপিসিআর অবশ্যই করাতে হবে প্রত্যেক যাত্রীকে।
রাজ্যে নতুন একটি বাহিনী তৈরি করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই নতুন বাহিনীর নাম দেওয়া হয়েছে 'জয় হিন্দ বাহিনী'। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি হিসেবে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ও স্বামী বিবেকানন্দকে সন্মান জানিয়ে এই বাহিনী গড়ে তোলা হবে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এই বাহিনীতে নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "এই বাহিনী মানুষ গড়ে তোলার কাজ করবে। সত্যিকারের খাঁটি মানুষ গড়ে তুলবে এই জয় হিন্দ বাহিনী এবং এই বাহিনীর পোশাক হবে ঠিক সেইরকম, যেমনটা ছিল নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীর পোশাক। এভাবেই নেতাজির ১২৫তম জন্ম বার্ষিকীতে তাঁকে সন্মান জানানো হবে।"
এছাড়াও রাজ্য সরকার দ্রুত একটি স্বাধীনতা সংগ্রহালয় বা ফ্রিডম মিউজিয়াম গড়ে তুলতে চলেছে কলকাতায়। চেষ্টা করা হবে এক মাসের মধ্যেই সেই মিউজিয়াম খুলে দেওয়ার জন্যে। এই মিউজিয়াম তদারকির জন্যে মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, মুখ্য সচিব ও এক পুলিশ কর্তাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে স্বাধীনতা সম্পর্কিত এই মিউজিয়াম দ্রুত পেতে চলেছে দেশের মানুষ।