আজ খবর (বাংলা), উদয়পুর, ত্রিপুরা, 17/10/2021 : “ভারত রত্ন”,প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের ৯০ তম জন্মদিন ছিল শুক্রবার । এই উপলক্ষে উদয়পুর মহকুমার ছাতারিয়া গ্রামের যুবক আলী আসরফ মিঞা (জালাল মিঞা) নিজের খরচে এ পি জে আবদুল কালামের একটি পূর্ণাঙ্গ ফাইবার ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপন করেন।
সেই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করলেন আগরতলা প্রেসক্লাবের সম্পাদক প্রণব সরকার । অনুষ্ঠানে উদয়পুরের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব প্রবীর দাস, পুর পরিষদের প্রাক্তন ভাইস-চেয়ারম্যান অনুপম চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রাণময় সাহা, দিলীপ দত্ত সমেত অবিভক্ত দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাংবাদিক বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন । স্থানীয় বিশিষ্ট শিল্পীরা জাতীয় স্তোত্র ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
স্বাগত ভাষণ দেন ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়া’র সাংবাদিক কিরণ ভৌমিক। উদ্বোধক প্রণব সরকার, অতিথি প্রবীর দাস,অনুপম চৌধুরী এই ধরনের প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য জালাল মিঞা’কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। জালাল মিঞা তাঁর ভাষণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিক এবং এলাকাবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে ছাতারিয়া গ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার সকালে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে এই অনুষ্ঠানের উদ্ভোধন করেন আগরতলা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক প্রনব সরকার। উদ্ভোদকের ভাষনে তিনি বলেন, জালাল মিয়া এমন একটা কাজ করেছেন যা রাজ্যের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে l সমাজ সেবি জালাল মিয়া যে কাজ নিজে একা করেছেন সেই কাজ সরকারী উদ্যোগে করা উচিত ছিল |
কিন্তু সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে জালাল মিয়া কাজ করে দেখিয়েছন যা প্রশংসার দাবি রাখে l তিনি আরো বলেন এপিজে আবদুল কালাম সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি, তিনি ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি | এ পি জ়ে আব্দুল কালামের বাবা নৌকার একজন মালিক ছিলেন l এ পি যে আব্দুল কালাম লড়াই-সংগ্রাম করে ভারতরত্ন উপাধি পেয়েছেন | তিনি পরমাণু বিজ্ঞানী হয়েছেন |
এটা আমাদের কাছে লড়াইয়ের একটা দশা | গ্রামীণ এলাকার ছোট্ট একটি গ্রাম থেকে যেভাবে তিনি বড় হয়ে নতুন দিশা দেখিয়েছেন আমাদের কাছে প্রেরণ | ওনার প্রতিটি কথা প্রতিটি লেখা ভারতবর্ষের প্রত্যেকের মনে থাকবে l উদয়পুরের একটি ছোট গ্রাম থেকে একজন সংখ্যালঘু ভাই জালাল মিয়া যে এরকম একটা কাজ করতে পারে এই কাজটা এলাকার লোকের স্বপ্ন দেখাবে | প্ররনা যোগাবে |
এলাকার সার্বিক উন্নয়নে সাহায্য করবে | প্রত্যেক বছর এখানে এই মনীষীর জন্মদিন এবং মৃত্যুদিন পালিত হবে | এই এলাকার যারা পিছিয়ে পড়ে রয়েছে তারা আরো এগিয়ে যাবে | এই কাজের জন্য জালাল মিয়া যে অবদান তৈরী করেছেন তাকে আগরতলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন আগরতলা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক প্রনব সরকার l
অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষনে রাজ্যের বরিষ্ঠ সাংবাদিক , প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক স্বপন কুমার ভট্রাচার্য বলেন , বহুকাল আগে ছাতারিয়া গ্রামে চারু ব্যাপারী নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি বাস করতেন। তিনি দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। ১৯১৮ সালে উদয়পুরে যখন টাউন হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়, তখন এই চারু ব্যাপারী করাতি ও অন্যান্য শ্রমিক দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি অর্থ সাহায্যও করেছিলেন।
চারু ব্যাপারী পরে বিনয় মজুমদারের সঙ্গে বিষয় সম্পত্তি বদল করে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমান বাংলাদেশে চলে যান। চারু ব্যাপারীর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে শতাব্দী কাল পরে ছাতারিয়া গ্রামের যুবক জালাল মিঞা বহু অর্থ ব্যয় করে এ পি জে আবদুল কালামের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানীর পূরণাবয়ব মূর্তি স্থাপন করে আর একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন উদয়পুরের ছাতারিয়া গ্রামের সমাজ সেবি জালাল মিয়া । অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক তনয়দীপ সাহা।
রিপোর্ট : বাণীব্রত দত্ত, ত্রিপুরা