আজ খবর (বাংলা), খড়্গপুর, পশ্চিমবঙ্গ : ০৪/০৪/২০২১ : তীব্র গরমে এক গ্লাস আখের রস আর তার মধ্যে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস কিংবা পুদিনা, আদা আর নুন মিশিয়ে খেলে যেমন দারুণ স্বাদ পাওয়া যায়, পাশাপাশি, এর পুষ্টিগত উপাদানও যথেষ্ট রয়েছে। ভারতীয় চিরায়ত ওষুধের মধ্যে আখের রসের উল্লেখ আছে।
ভারত বিশ্বে সর্ববৃহৎ আখ উৎপাদনকারী দেশ। আখের রস খেলে যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে তা লাভজনক হয়, পাশাপাশি হাড় শক্ত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজম শক্তি বাড়ায় এবং সর্বোপরি মানসিক চাপ দূর করে। পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লোহা, দস্তা, থিয়ামিন, রাইবোফ্লেবিন౼ সহ বিভিন্ন অ্যামাইনো অ্যাসিড আখের মধ্যে রয়েছে। ২৪০ মিলিলিটার আখের রসের মধ্যে ১৮০ ক্যালোরি, ৩০ গ্রাম চিনি ছাড়াও উপকারী তন্তু পাওয়া যায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আখের মধ্যে থাকায় তা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট লাভজনক।
আখের রসের মধ্যে তাই বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ‘সি’ ও ‘বি’ থাকায় হিট-স্ট্রোক, শরীরের থেকে জল বেরিয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ও জন্ডিসের মতো অসুখের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আখের রসে কম গ্লাইসেমিক সূচক থাকায় ডায়াবেটিক রোগীরাও এটি খেতে পারেন। তবে, আখের থেকে রস বের করলে ওই রসের রং এবং গন্ধ দ্রুত পরিবর্তিত হয়, কারণ অতিক্ষুদ্র জীবাণু ওই রসকে গেঁজিয়ে দেবার ফলে, তা খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। যেহেতু আখের রস তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, তাই একে বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা যায়।
এ কারণে স্বাদ ও গন্ধও অপরিবর্তিত রেখে আখের রসের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটালে তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব । তবে, এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাপ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইআইটি খড়্গপুরের এগ্রিকালচারাল ও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষিকা শ্রীমতী চিরস্মিতা পানিগ্রাহী তাঁর গবেষণায় দেখেছেন, ওজোনের মাধ্যমে আখের রসকে জীবাণুশূণ্য করলে সেটি অনেকদিন ঠিক থাকে। এক্ষেত্রে কোনও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করতে হয় না।
আখ থেকে রস বের করে , তার ওজোনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটালে সেই রস অনেকদিন পর্যন্ত ঠিক থাকে। এক্ষেত্রে ব্যাক্টেরিয়া বা ইস্ট এবং মোল্ডের মাধ্যমে সেটি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম হয়। শ্রীমতী পানিগ্রাহী জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ১২ সপ্তাহ ফ্রিজে আখের রস মজুত করে রাখা সম্ভব।
এক্ষেত্রে এর গন্ধ এবং বর্ণ দুটিই যথাযথ থাকে। এগ্রিকালচারাল ও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এইচ এন মিশ্রের তত্ত্বাবধানে চিরস্মিতা এই গবেষণা চালিয়েছেন। এ কাজে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শীর্ষেন্দু দে তাঁকে সহায়তা করেছেন। এই উদ্ভাবনের ফলে চিরস্মিতাকে কেন্দ্রের জাতীয় গবেষণা উন্নয়ন নিগমের এনআরবিসি ন্যাশনাল মেরিটোরিয়াস ইনভেনশন পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।