আজ খবর (বাংলা), নতুন দিল্লী, ভারত, ২৮/০৪/২০২১ : বিভিন্ন মহল থেকে চাপে পড়ার পর, নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল যে তারা নির্বাচন সংক্রান্ত কাজকর্মগুলি সবরকম কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সম্পন্ন করেছে এবং করে চলেছে। কোভিড স্বাস্থ্যবিধ মেনে চলার ব্যাপারে তারা সবরকম সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
১৩৫ নম্বর কারুর বিধানসভা কেন্দ্রের দোসরা মে ভোট গণনার দিন যাতে কোভিড – ১৯ সংক্রান্ত যথাযথ বিধি মনে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য ২৬ এপ্রিল বিজয় ভাস্কর মাদ্রাজ হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। আদালত, নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য পরীক্ষা করে নির্দেশ দিয়েছে, প্রতিটি গণনা কেন্দ্রে যেন যথাযথভাবে নিয়ম মেনে চলা হয়। এর জন্য গণনা কেন্দ্রে নিয়মিত স্যানিটাইজেশন, যথাযথ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশকের সঙ্গে আলোচনার পর নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
উচ্চ আদালতের বক্তব্য বলে কিছু সংবাদ মাধ্যমে এর আগে যে সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল তা চূড়ান্ত রায়ে স্থান পায়নি বলে নির্বাচন কমিসনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। কমিশন, আদালতের সব নির্দেশ যথাযথভাবে মেনে চলবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচন সুনিশ্চিত করতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেবিষয়ে ৩০শে এপ্রিল বিস্তারিতভাবে জানাবে। কোভিড – ১৯ এর মান্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে বিভিন্ন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
যথাযথ কোভিড বিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা – যেমন লকডাউন, বিধি নিষেধ, জনসমাগমের বহর কমানো ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব রাজ্য বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এসডিএমএ)। এই সময়ে ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুসারে এসডিএমএ, জনসমাবেশ বন্ধ করতে পারে না। নির্বাচন কমিশন, সকলকে প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিধি ভঙ্গ করলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) এবং এসডিএমএ –র নিয়মগুলি মেনে চলা হচ্ছে কিনা, সেটি নিশ্চিত করার জন্য রাজ্য ও জেলা কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিয়ত নির্দেশ দিয়েছে। এনডিএমএ এবং এসডিএমএ –র নিয়ম অনুসারে ২০২০ সালে লকডাউনের মধ্যেও কমিশন, বিহারে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এক্ষেত্রে ২০০৫ সালের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আইন যাতে যথাযথভাবে মেনে চলা হয়, সে বিষয়টি রাজ্য বিপর্যয় ব্যস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। ২০২০র ২১শে আগস্ট কমিশন, জোর দিয়ে বলেছে, জনসমাবেশের মতো বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারে কোভিড বিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে এবং রাজ্য কর্তৃপক্ষ সেটি নিশ্চিত করবে। কোভিড – ১৯ সংক্রান্ত নির্দেশাবলী যথাযথভাবে পালন করার দায়িত্ব রাজ্য কর্তৃপক্ষের থেকে কমিশন কখনই নেয় নি। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, ২৬শে ফেব্রুয়ারী তামিলনাডু সহ ৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নির্বাচনের সময়সূচী ঘোষণা করা হয়। তামিলনাডুতে চৌঠা এপ্রিল প্রচার শেষ হয়। সেই সময়ে কোভিড – ১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ দেখা যায় নি। সব রকমের নিয়ম মেনে ৬ই এপ্রিল বিপুল সংখ্যক ভোটদাতা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এই বিষয়গুলি কমিশন সুযোগ মতো বিভিন্ন হাইকোর্টে জানিয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্ট, ২৩শে এপ্রিল এক আদেশে বলেছে, নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানকে মেনে চলতে হবে। কমিশন, যা যা নির্দেশ দেবে, সেগুলি মেনে চলতে হবে।
২৬শে এপ্রিল মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট ৬ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচন সঠিকভাবে হয় নি বলে দায়ের করা এক পিটিশন খারিজ করে দেয়। কেরালা হাইকোর্ট, রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, কোভিড বিধি মেনে কিভাবে ভোট গণনা করা হবে, সেবিষয়ে বিস্তারিত জানাতে। আদালত, ২৭শে এপ্রিল নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আদালত জানিয়েছে, এর থেকে বেশি আর কিছু করার নেই এবং এ সংক্রান্ত আবেদনগুলি নাকচ করে দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন, দোসরা মে ভোট গণনার দিন সমস্ত কোভিড বিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য সচিব ও স্বাস্থ্য সচিব এবং মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। ২৭শে এপ্রিল কমিশন জানিয়েছে, দোসরা মে ভোট গণনার পর কোনো বিজয় মিছিল করা যাবে না। রিটার্ণিং অফিসারের কাছ থেকে বিজয়ী শংসাপত্র নেওয়ার জন্য জয়ী প্রার্থীর সঙ্গে ২ জনের বেশি থাকতে পারবেন না।
এনডিএমএ ও এসডিএমএ –এর মূল্যায়নের পর কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ তামিলনাডুতে আছড়ে পড়ায় ওই রাজ্যে নির্বাচনী প্রচার শেষ হওয়ার ১৬ দিন পর, ২০ই এপ্রিল থেকে লকডাউন সংক্রান্ত বিধি – নিষেধ জারি করা হয়েছে।