আজ খবর (বাংলা), নন্দীগ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ৩০/০৩/২০২১ : রাজ্যের মানুষ যখন বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের অপেক্ষায় দিন গুনছেন, যখন রাজ্যের সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে এবার পরিবর্তন নাকি প্রত্যাবর্তন, তখন পরিবর্তনের সবচেয়ে সহজ উপায় জানিয়ে রাখলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
অমিত শাহ আজ বলেন, "যদি নন্দীগ্রাম থেকে দিদি হেরে যান, তাহলেই সবচেয়ে সহজ উপায়ে রাজ্যে পরিবতন আনা সম্ভব হবে।" কিন্তু দিদি যদি জিতে যান তাহলে কি হবে ? সেটা একবারও বলেন নি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বরং তিনি বলেছেন আজ নন্দীগ্রামে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ এবং উন্মাদনা দেখতে পেলাম, তাতে আমি বুঝতেই পারছি নন্দীগ্রাম আসন থেকে শুভেন্দু অধিকারীই জিততে চলেছেন।" যদিও এই কথা হয়ত তিনি নিজের দলের সমর্থকদের উজ্জীবিত করার জন্যেও বলে থাকতে পারেন। তবে ভোট যদি বেশি পড়ে, তাহলে তা বিরোধী প্রার্থীকেই বেশি খুশি করে। প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গে ৭৯.৭৯% ভোট পড়েছে। আগামী পরশু (১লা এপ্রিল) অবাধ নির্বাচন করতে নন্দীগ্রামকে রীতিমত ঘিরে রেখেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
তৃণমূলের তরফ থেকে অবশ্য এই কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেই আজ অভিযোগ তোলা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে বলেছেন, "বাইরের রাজ্য থেকে এখানে বাহিনী এনে টাকা ছড়ানো হচ্ছে। কেদ্রীয় বাহিনীর গাড়ি থেকে টাকা বিলি করা হচ্ছে। অন্য রাজ্য থেকে আনা বাহিনী আমাদের সমর্থকদের ওপর অত্যাচার করছে।" এর আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রাভাবিত করছে বিজেপি এমন কথা বলেছিলেন আর আজ সরাসরি কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকে আঙ্গুল তুললেন তৃণমূল নেত্রী।
আগামী পরশু হাই ভোল্টেজ নন্দীগ্রামের ভোটের দিকে নজর থাকবে সকলের। নন্দীগ্রামকে এবারের বিধানসভা ভোটের মূল কেন্দ্রস্থল হিসেবে বলা হচ্ছে। কিন্তু কেন নন্দীগ্রামকে ঘিরে এত উত্তেজনা ? এবার নন্দীগ্রামে মুখোমুখি যুদ্ধে অবতীর্ন হতে চলেছেন বাংলার সবথেকে আলোচিত দুই রাজনৈতিক চরিত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের প্রচারের আলো যেমন সবটাই শুষে ফেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেমন এবারের ভোটে বিজেপি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি নির্ভর করছে শুভেন্দু অধিকারীর ওপর।
২০১৬ সালে তমলুক লোকসভা আসনে (নন্দীগ্রাম সমেত) বিজেপি মোট ১,৯৬,০০০ ভোট পেয়েছিল। এরপর গত লোকসভা ভোটে রাজ্যে ৪০% এর চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে ১৮টি আসন জিতে নিয়েছিল বিজেপি। যেখানে তৃণমূল পেয়েছিল ২২টি আসন। বিজেপির এই অভ্যুত্থান চমকে দিয়েছিল তৃণমূলকে। লোকসভা ভোটের এই অসাধারন ফলাফল আজ বিধানসভা ভোটে হাড্ডাহাড্ডি টক্কর নেওয়ার জায়গায় পৌঁছে দিয়ে পদ্ম শিবিরকে।
বিশেষ করে উত্তর বঙ্গ, জঙ্গলমহল এবং পাহাড়ে যে ফলাফল বিজেপি করেছিল, তা যেন দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জায়গায় যেখানে বিজেপি সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি, সেইসব জায়গাগুলোতেও ঝাঁপিয়ে পরার জন্যে অতিরিক্ত অক্সিজেন জুগিয়েছে গেরুয়া দলকে। দক্ষিণবঙ্গ হচ্ছে রাজ্যের সবচেয়ে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা। ২৯৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৭টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে দক্ষিণবঙ্গেই। সুতরাং দক্ষিণ বঙ্গেই যদি পদ্ম ফোটাতে ব্যর্থ হয় বিজেপি, তাহলে তাদের পক্ষে এই রাজ্যে তৃণমূলকে টেক্কা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে।
তৃণমূল ছেড়ে চলে এসে শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, তিনি ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৫০ হাজার ভোটে হারাবেন, নাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। উল্টো দিকে তৃণমূল ছেড়ে বিরোধী দলে যোগ দেওয়া নিয়ে শুভেন্দুকে বার বার রাজনৈতিকভাবে আক্রমন করে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অধিকারী পরিবারকে বার বার অসম্মানিত করেছেন তৃণমূলের বিভিন্ন নেতারা। সেই অসম্মানের যোগ্য জবাব ভোটের ফলাফলে দিতে চান শুভেন্দু। আবার যেহেতু ভোটের আগে শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন, তাই তাঁকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়ে সবক শেখাতে চায় তৃণমূল। সুতরাং নন্দীগ্রামের এই লড়াই দুই পক্ষের কাছেই প্রেস্টিজ ফাইট ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। মমতা চাইছেন প্রত্যাবর্তন করতে, শুভেন্দু চাইছেন পরিবর্তন করতে। আ সেই কারণেই নান্ডাগ্রাম নিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে উঠেছে।আগামী পরশু ভোট হবে নন্দীগ্রামে। নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে গণনার দিন অর্থাৎ ২রা মে। সুতরাং ওই দিনটার দিকেই তাকিয়ে অপেক্ষা করতে হবে রাজ্যবাসীকে।