আজ খবর (বাংলা), কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ২৫/০৩/২০২১ : পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই বাগযুদ্ধের রেষারেষি বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। মাঝে মাঝে বাগযুদ্ধের ভাষা হারিয়ে ফেলছে সব শালীনতা। সব কিছুই দেখছে বা শুনছে জনতা জনার্দন। কিন্তু শালীনতা হারানো এইসব ভাষা প্রয়োগ করে শেষ পর্যন্ত ভোটবাক্সে না খেসারত দিতে হয় নেতা নেত্রীদের !
ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, "একজন মহিলা শাড়ি পড়ে পায়ে ব্যান্ডেজ দেখিয়ে ভোট ভিক্ষা করছেন। এই বিষয়টা মানুষ ভালভাবে নিচ্ছে না। সবাই আপত্তি করছে। যদি পায়ের ব্যাণ্ডেজ ভালভাবেই দেখাতে হয় তাহলে তাঁর উচিত শাড়ি না পড়ে বারমুডা পড়ে এসে ভোটভিক্ষা করা।" নিজের বক্তব্যে অনড় থেকে আজ দিলীপ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, "তিনি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, আমরা আশা করব তিনি সেটাই করবেন, যেটা আমাদের বাংলার সংস্কার ও সংস্কৃতির সাথে মেলে, কিন্তু তিনি যা করছেন, তা আমাদের সংস্কৃতির সাথে মেলে না, তিনি শাড়ি পরে এসে পা দেখাচ্ছেন, পায়ের ব্যান্ডেজ দেখাচ্ছেন। যে কারনে অনেকেই আপত্তি জানিয়েছেন। আমারও বিষয়টা ভাল লাগেনি। তাই আমিও আপত্তি জানিয়েছিলাম।"
দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্যকে তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কারন দিলীপ ঘোষ এই বক্তব্য তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যেই করেছেন। তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্র বলেছেন, "এইসব বিকৃত মনস্ক নিম্ন শ্রেণীর বাঁদররা বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছে ?" শিব সেনার নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেছেন, "এই ধরনের মন্তব্য বিজেপির মহিলা বিরোধী মানসিকতার পরিচয়, ওদের প্রয়োগ করা ভাষা বোঝায় যে ওরা মানসিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। বাংলায় হেরে যাওয়ার ভয়েই ওরা এইরকম ভাষা প্রয়োগ করছে। "
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রসঙ্গে তাঁর জনসভাগুলোতে এর আগে নানান কটু কথা বলেছেন, আজও বলেছেন। বিজেপিকে আক্রমন করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে 'খুনীদের রাজা', 'খুনীদের সর্দার', 'ডাকাত সর্দার', 'চম্বলের দস্যু', ইত্যাদি নানানা আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বিজেপিকে বর্গীদের সাথে তুলনা করেছেন,. একাধিকবার বলেছেন 'বিজেপি চুরি করে'। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তুই তোকারি করতেও ছাড়েন নি তিনি। এমনকি বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার পদবি নিয়েও মস্করা করেছেন। নানান কটু কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধেও। তাঁর কটু কথা থেকে বাদ যায় নি কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং দিলীপ ঘোষ এবং অন্যান্য বিজেপি নেতারা। বিরোধী দলগুলিকে তিনি হামেশাই জগাই, মাধাই ইত্যাদি নামে সম্বোধন করেন।লোকসভা ভোটের আগেও তাঁর ভাষণ শালীনতা হারিয়েছিল বিভিন্ন জনসভায়। সেইসব কটু বাক্য প্রয়োগের ফল তৃণমূল ভোটের ফলাফলে পেয়েছিল।
তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে গতকাল নানুরের তৃণমূল নেতা শেখ আলম বলেছিলেন, "ভারতে সংখ্যালঘুরা ৩০%, এই ৩০% যদি এককাট্টা হয়, তাহলে ভারতে ৪টি পাকিস্তান তৈরি হয়ে যাবে।" এ এক সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমূলক মন্তব্য বলে বিষয়টি সমাজ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। এখানকার নির্বাচনী জনসভা এবং প্রচারে কান পাতলে এরকম নানান বিরূপ ও অশালীন মন্তব্য শুনতে পাওয়া যাবে। এতে করে পরিবেশটাই যেন দূষিত হয়ে উঠেছে ! অনেকেই প্রস্হান তুলেছেন এত কটু কথা কেন ? যে যা খুশী তাই বলছে ? কিন্তু কটু কথা বলে তো আর ভোট বৈতরণী পার করা সম্ভব হয় না ! এখানে রায় দেবে জনতা জনার্দন। মে মাসের ২ তারিখেই পরিস্কার হয়ে যাবে কোন দলকে কতটা গ্রহণ করল পশ্চিমবাংলার আমি জনতা।