আজ খবর (বাংলা), দেশের খবর, নতুন দিল্লী, ভারত, ১৯/০৩/২০২১ : ভারত নিজেই করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্কার করেছে। সেইরকম দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষেধক ডোজ দেওয়ার কাজও চলছে দেশজুড়ে, সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি বলবৎ করাও আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নতুন করে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
কিছুদিন আগেও ভারতে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল। সেই সংখ্যা নামিয়ে আনা গিয়েছিল ৯ হাজারের নিচে, কিন্তু এখন দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে প্রায় ৪০ হাজার (৩৯,৭২৬) ছুঁয়ে ফেলছে। এর মধ্যে কি এমন ঘটনা ঘটল, যাতে এইভাবে কোরোনার সংক্ৰমন বেড়ে চলেছে ?
আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। অনেকেই করোনা ভাইরাসকে অনেকটা হালকা ভাবে নিতে শুরু করেছেন। হাত বার বার সাবান দিয়ে ধোয়া তো দূর, বেশিরভাগ মানুষ স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেও অনীহা দেখাচ্ছেন। বহু মানুষ মুখ মাস্ক ব্যবহার করছেন না, বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও তা ঝুলছে থুতনির নিচে। হাতে গ্রাভসও কেউই আর ব্যবহার করছেন না। সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা, তা হল মানুষ আদৌ নিজেদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছেন না। ভাবখানা এমন, যেন দেশে যখন করোনার প্রতিষেধক বেরিয়েই গিয়েছে, তাহলে এসবের আর দরকারটা কি !
দেশের আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল খোলা রয়েছে। সেখানে কিছু নিয়ম কানুন জারি করা হয়েছে। বিমানগুলিকে নিয়মিত স্যানিটাইজ করা হলেও সংক্ৰমন বেড়েছে। ইতিমধ্যে দেশে বেশ কিছু জায়গায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসব হয়েছে, যেখানে মানুষ ভীড় করেছে। দেশের ৫ রাজ্যে এই মুহূর্তে বিধানসভা নির্বাচন চলছে, সেখানেও জনসভাগুলোতে মানুষের ভীড় হচ্ছে প্রতিদিন। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় উঠেছে। চালু হয়েছে রেল পরিষেবা। ভীড় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে সেখানেও। এছাড়াও খুলে গিয়েছে স্কুল, কলেজ, সিনেমা, থিয়েটার, পর্যটন। যেখানে মানুষের প্রচুর ভীড় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এই জায়গাগুলিতেও স্বাস্থ্যবিধি সেভাবে মেনে চলা হচ্ছে না, যার ফলেই সংক্ৰমন বেড়ে চলেছে ব্যাপকহারে। এই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়বে আরও, বলে মনে করা হচ্ছে। এর পরেও আছে প্রতিষেধক নেওয়ার অনীহা। যার পিছনে আবার রাজনীতিও আছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে শুরু করা হয়েছে নাইট কার্ফু। ফের লক ডাউন করা হবে কিনা, চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে সেই ব্যাপারেও। কিন্তু তার পিছনেও আছে রাজনীতি। তবে মূল সমস্যা হল অর্থনীতি। লক ডাউন করলে অর্থনীতিতে ব্যাপক প্ৰভাৱ পড়ছে। সেক্ষেত্রে লক ডাউন না করেই যদি কোরোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি সংযত এবং সতর্ক হতে হবে। যেটা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে আমাদের দেশে।
তবে আর কিছুদিনের মধ্যে যদি মানুষ সংযত এবং সতর্ক না হন, তাহলে প্রতিষেধক থাকলেও ফের একবার ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে এই মারণ ব্যাধি। যেভাবে ফের করোনা ভাইরাস দাপট দেখতে শুরু করেছে, তাতে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা লাখের ঘরে পৌঁছে যেতে বেশি দিন লাগবে না। সেক্ষেত্রে যত সমস্যাই হোক না কেন, ফের অনির্দিষ্টকালের জন্যে লক ডাউনের পথেই হয়ত চলতে হবে দেশকে। আর সেই পথে চলতে না চাইলে মানুষকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে, আর সেটা এখনই।