আজ খবর (বাংলা), পৈলান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ১৮/০২/২০২১ : 'বিজেপির অপপ্রচারের' বিরুদ্ধে আজ পৈলানের জনসভা থেকে ক্রুদ্ধ বাঘিনীর মত গর্জে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পৈলানের জনসভায় আজ তাঁর সাথে ছিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
পৈলানের জনসভা থেকে মমতা বলেন, "গঙ্গাসাগর কি ছিল ? লজ্জা করে না ? আবার ওরা জিজ্ঞাসা করছে 'গঙ্গাসাগর কেয়া হ্যায় ?' বলছে, 'হামলোগ আকে সব কর দেগা', তোমরা 'ছাই করেগা'। গঙ্গাসাগরের প্রচুর উন্নয়ন করেছি আমরাই। গঙ্গাসাগর আজ অনেক উন্নত। খালি সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত দিদি আর ভাইপো ! আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আগে ভাইপোর সাথেই লড়াই করে দেখ, তারপর দিদির নাম নেবে। ওর গায়ে আঁচড় পড়লে অমিত শাহ তোমার ছেলেও পার পাবে না।তোমার ছেলেও আমার ভাইপো হয়।"
মমতা বলেন, "আম্ফাণে যখন নবান্ন দুলছিল, এখানকার মানুষ যখন বিপদে ছিল, সেই সময় নাটক করে প্রধানমন্ত্রী এসে হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের অগ্রিম বাবদ দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই টাকা তো এমনিতেই আমাদের প্রাপ্য। সেই টাকা দিয়ে কি হয় ? আমাদেরই টাকা আমাদের দিয়ে চলে গেলেন। আবার বলছে আমাদের রাজ্যে নাকি সরস্বস্তী পূজা হয় না ! আগে তোরা সরস্বতী পূজার মন্ত্রটাতো বল ! আমাদের এখানে নাকি দুর্গাপূজা হয় না ! তাহলে ২৮ হাজার ক্লাব ৫০ হাজার টাকা কি জন্যে পেল ? আমাদের হিন্দু ধর্ম শেখাচ্ছে ? আমরা ওদের কান ধরে হিন্দু ধর্ম শিখিয়ে দিতে পারি।"
এদিন মমতা বলেন, "খালি ওরা বার বার বলে বেড়াচ্ছে, হম জিতেঙ্গে , হম জিতেঙ্গে, কাঁহা সে জিতেঙ্গে ? কলা খাও, ভাগ যাও। ওরা এখানে আসলে কান মুলে দেবেন। কান মুলে দিলে কোনো কেস হয় না। খালি বার বার রাজ্যে চলে আসছে আর বলছে 'মমতাজী ইয়ে নেহি কিযে'। বাংলার সব রকম উন্নয়ন আমরাই করেছি। এনআরসি বা এনপিআর করে দেখাও দেখি ? আগে নিজেদের বাবা মায়ের সার্টিফিকেট নিয়ে এস, তারপর আমাদের দিকে তাকাবে। আমাদের সাথে লড়াই করা এত সহজ নয়। মিডিয়াগুলোও সারাদিন মিউ মিউ করে বিজেপিকে সমর্থন করে লিখছে !"
পৈলানের জনসভা থেকে মমতা বলেন, "বিজেপি এমন একটা পার্টি যারা ঘরে ঘরে ডিভোর্স করায়। বাবা আর মেয়ের মধ্যে বিভেদ করায়। শুধু হিন্দু মুসলমানের বিভেদ করায় তা নয়, মানুষের সাথে মানুষের বিভেদ করায়। গরীব মানুষের বাড়িতে গিয়ে ফাইভ ষ্টার হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে খাচ্ছে। গরীব মানুষকে অপমান করছে। বিজেপি একটা ঘৃণ্য, বর্বরোচিত, স্বৈরাচারী রাজনৈতিক দল। আগে তোমরা দিল্লী সামলাও, আবার এসেছে বাংলা দখল করতে ! মমতাদির মত মার্ খেয়ে রাজনীতি তোমরা করতে পারবে না। অত নাদুস নুদুস চেহারা নিয়ে ফুটুস ফাটুস করা যায়, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে লড়াই করা যায় না। "
এরপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্বন্ধে বলতে গিয়ে আবেগপ্রবন দেখায় নেত্রীকে। তিনি বলেন, "অভিষেককে আমিই রাজনীতিতে এনেছি, কিন্তু ওকে আমি কোনো অতিরিক্ত সুবিধা দিই না। আপনারা জানেন ? যখন সিপিএম-এর হাতে মার খেয়ে আমার মাথা ফেটে চৌচির, অনেক দিন ধরে আমার মাথায় ব্যাণ্ডেজ করা ছিল। সেই সময় অভিষেকের বয়স ২ বছর, সেই সময় আমার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে ও স্লোগান দিত, মিছিলে চলে যেত। ওর এই ব্যাপার স্যাপার দেখে আমিই ওকে রাজনীতিতে এনেছিলাম। ওর ওপরেও প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। তাতে ও ওর এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। ওর চোখ উপরে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি বিশ্বাস করি আমার পরিবার কোনো খারাপ কাজ করতে পারে না। আমাকে যত খুশী আক্রমন কর, আমার পরিবারের ছোটদের বা বৌদের আক্রমন আমি কিন্তু বরদাস্ত করব না।"
মমতা আজ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, "অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ করছি, নিজের ছেলেকে রাস্তায় নামিয়ে রাজনীতি করতে বলুন। তুমি ভদ্রতা করলে আমিও ভদ্রতা করব। আমার সাথে লড়তে এস না, পারবে না। আপনাদেরকে বলছি, কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে ভয় দেখলে ভয় পাবেন না। বাড়ির মহিলাদের এগিয়ে দেবেন, আমার মা বোনেরাই হাতাখুন্তি দিয়ে তাদের মোকাবিলা করবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে বলবেন 'বাড়ি যাও'। বাইরের লোকেদের এলাকায় ঢুকতে দেবেন না। বিজেপি বাইরে থেকে গুন্ডা নিয়ে আসছে। সতর্ক থাকবেন। অমিত শাহ জেনে রাখো, ২০২১-এর নির্বাচনে আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে আমরাই বিপুল ভোটে জিতব। আমি রাস্তায় নেমে লড়াই করব আর আমার কর্মী সমর্থকেরা বুথ আগলাবেন। ২০২১-এর ভোটে 'মা মাটি মানুষে'র সরকার জিতবে আর বিজেপির মুখে ঝামা ঘসে দেবে।"