আজ খবর (বাংলা), আসানসোল, পশ্চিমবঙ্গ, ১৩/০১/২০২১ : কয়লা পাচার এবং গরু পাচার চক্রের মূল অপরাধীদের হদিশ পেতে পশ্চিমবঙ্গে তাদের তল্লাশি আভিযান আরও জোরদার করল সিবিআই।
গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কয়লা পাচার এবং গরু পাচারকারীদের ধরতে ব্যাপকভাবে তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই। গত সপ্তাহেই কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিলেন সিবিআই অফিসারেরা। বেশ কয়েকটি আবাসন এবং অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। কলকাতার বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে এনামুল হকের অফিসেও তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের এই অফিস থেকেই এর আগেরবার সিবিআই তল্লাশির সময় ৫০০ এবং ২০০০ টাকার নোট জানলা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, যা আকাশে ভেসে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় এই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। এবারেও সেই একই অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছে, এই অফিসটি গরু পাচার কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হকের বলে জানা গিয়েছে।
আজ পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল এলাকায় সিবিআই তল্লাশি অভিযান চালিয়েছ। মোট ৭৫জন সিবিআই অফিসার বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গিয়ে আসানসোলের কয়লা খনি অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয় সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, কলকাতায় আরও ৫টি দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে প্রয়োজনে তল্লাশি অভিযানে আরও দল ব্যবহার করা যায়। আজ রাজ্যের মোট ৩০টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই বলে জানা গিয়েছে।
সিবিআই-এর টার্গেটে রয়েছে অনুপ মাঝি এবং তৃণমূল নেতা বিনয় মিশ্র। এর মধ্যে কলকাতার তিনিটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও বিনয় মিশ্রের হদিশ পায় নি সিবিআই। গরু পাচার ও কয়লা পাচারকাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত ব্যবসায়ী তথা যুব তৃণমূলের নেতা বিনয় মিশ্রের কলকাতার বাড়িগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথী এবং তথ্য উদ্ধার করেছে সিবিআই। যা থেকে মনে করা হচ্ছে বিনয় মিশ্র দুবাই বা অন্য কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে বিনয় মিশ্র তিনটি পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। তাই তার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশ জারি করেও কোনো লাভ হয় নি। এখনো ধরা পড়েনি বিনয় মিশ্র।
এর আগে যেমন গড়িয়া এবং কোন্নগরে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছিল, তেমন আজ সিবিআই-এর ৭৫ জন অফিসারের বিভিন্ন দল আসানসোল, রাণীগঞ্জ, অন্ডাল এবং রানীগঞ্জে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। বিনয় মিশ্রকে না পেয়ে এবার আগামী ১৫ তারিখে বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশ মিশ্রকেও তলব করা হয়েছে। এছাড়াও গরু পাচার এবং কয়লা পাচারের সাথে যুক্ত সন্দেহে বিনয় মিশ্র ও অনুপ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তিদেরকেও জেরা করার কাজ চালাচ্ছে সিবিআই। শুধু তাই নয়, রাজ্যের মোট ২০ জন আইপিএস অফিসারকেও এই বিষয়ে জেরা করার জন্যে তলব করতে চলেছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই তিন আইপিএস অফিসারদের তলব করা হয়েছে, ওই তিন আইপিএস অফিসার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং বলেছেন, সিবিআই তাঁদের ঠিক কি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নোটিশ পাঠিয়েছে, সেই বিষয় সম্বন্ধে নোটিশে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। অবশ্য সিবিআই এরপর আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে নোটিশ পাঠানো এবং জেরা করার বিষয়ে আরও কোমর বেঁধে নামতে চাইছে বলে জানা গিয়েছে।
তলব করা আইপিএস অফিসারদের নাম সিবিআই জানতে পেরেছে অন্যান্য পুলিশ কর্মী এবং ব্যবসায়ীদের জেরা করে।এদিকে গরু পাচার এবং কয়লা পাচারের টাকা কোথায় কোথায় কিভাবে খাটানো হত, সেই বিষয়ে তথ্য জোগাড় করতে তদন্তে নেমেছে আয়কর দপ্তর। আজ সকালে আয়কর দপ্তরের কর্মীরা সিআরপিএফ জওয়ানদের নিয়ে কলকাতায় বাংলাদেশে ফল রপ্তানির ব্যবসায়ী আম্বিয়া সাম্বিয়ার বাড়িতে হানা দেয়। ২০১৬ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে Hit & Run কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েছিলেন এঁরা। সেই ঘটনায় কলকাতার রেড রোডের কাছে এক বায়ু সেনা অফিসার আম্বিয়া- সাম্বিয়ার গাড়িতে চাপা পড়ে নিহত হয়েছিলেন।