মমতা বন্দ্যোপধ্যায় |
আজ খবর (বাংলা), নন্দীগ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ১৮/০১/২০২১ : আজ নন্দীগ্রামের জনসভা থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিনি নন্দীগ্রাম থেকেই দাঁড়াচ্ছেন। পাশাপাশি ভবানীপুর থেকেও তিনি প্রার্থী হতে পারেন।
আজ নন্দীগ্রামের তেখালি ব্রীজের পাশের বিশাল মাঠে জনসভা করতে গিয়ে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতি চারণা দিয়ে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "আপনাদের মনে আছে এই তেখালি ব্রীজের পাশেই গুলি চলেছিল ? আমার গাড়িতেও ২/৩টি বুলেট লেগেছিল। ১৪ই মার্চ সেই দিনটা আপনাদের মনে পড়ে ? আমি ২৬দিন অনশন করেছিলাম। আমি বলেছিলাম জোর করে জমি নেওয়া যাবে না, কেমিক্যাল হাব হবে না। অনশনের পর আমার শরীর ভেঙে পড়েছিল। আমার দু'টো অপারেশন হয়েছিল। তাতেও আমি দমে যাই নি, আপনারা সবাই ছিলেন আমার পাশে। আমাকে পেট্রল বোমা দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিল. বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করেও আমাকে আটকাতে পারে নি। শেষ পর্যন্ত ভারত সরকারও পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল। সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের মত সফল আন্দোলন আর হয় নি।.সেইসব দিন পেরিয়ে আমি এখানে এসেছি।"
মমতার সভায় জন প্লাবন |
মমতা বলেন "নন্দীগ্রামের সব জায়গা আমি চিনি। নন্দীগ্রামের সাথে আমার আত্মার টান। সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামের আন্দোলন নিয়ে আমার নিজের লেখা বই আছে। পরবর্তীকালে নন্দীগ্রামের উন্নয়ন হয়েছে। দীঘা তমলুক ট্রেন আমরাই করে দিয়েছি। নতুন দীঘা সাজিয়ে দিয়েছি। তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর করার কাজ করছি। অশোক নগরে গ্যাস পাওয়া গিয়েছে। হলদিয়াতে রিফাইনারি হবে। প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। নন্দীগ্রাম এবং হলদিয়ার মাঝে হলদি নদীর ওপর ব্রীজ যাতে হয়, সেটা আমি দেখব। আরও অনেক উন্নয়ন হবে নন্দীগ্রামে। কেলেঘাই- কাপালেশ্বরী আমি করে দিয়েছি। সব ঘরে ঘরে যাতে পানীয় জল পৌঁছায়, তার জন্যে জন্যে ১৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নন্দীগ্রাম অঞ্চলে মোট ৭টি কৃষক মাণ্ডি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। নন্দীগ্রামের নিখোঁজ এবং শহীদ পরিবারকে প্রতিমাসে ১,০০০ টাকা করে পেনশন যাতে দেওয়া শুরু হয়, সেটাও দেখছি। কৃষি জমিতে এখন খাজনা তুলে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো অসুবিধা মনে হয়, তাহলে 'দুয়ারে সরকারে' গিয়ে যোগাযোগ করবেন। দেড় কোটি মানুষ এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন।"
জনসভার মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, "নন্দীগ্রামের শহীদদের আমি কখনো ভুলব না। মনে রাখবেন, আন্দোলন কেউ কখনো ভোলে না। নন্দীগ্রাম আমার কাছে খুব লাকি। ২০১৬ সালে এই নন্দীগ্রাম থেকেই আমি নির্বাচনী যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। ২০২১ সালের নির্বাচনেও নন্দীগ্রাম থেকে তৃণমূল জিতবে। পশ্চিমবাংলা থেকেও তৃণমূল জিতবে। কেউ কেউ একটু ইধর উধর করছে। সে সব নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না। ওদের মোকাবিলা করার জন্যে এখানে সুপ্রকাশ গিরির মত নেতারাই যথেষ্ট। আগে সুপ্রকাশ গিরির সাথে লড়াই করুক, তারপর আসবে তৃণমূলের সাথে লড়াই করতে। তৃণমূলের সাথে লড়াই করা এত সহজ নয়। বিজেপি দিল্লী থেকে বলছে, হয় জেলে থাকো না হলে ঘরে থাকো। ওরা 'ওয়াশিং পাউডার ভাজপা'। ওয়াশিং মেশিনে পরিণত হয়েছে। তৃণমূলে থাকলে কালো, আর বিজেপিতে গেলেই সব সাদা ! আমি বলি, তোমরা প্রধানমন্ত্রী হতে পারো, রাষ্ট্রপতি হতে পারো, উপরাষ্ট্রপতি হতে পারো, কিন্তু বাংলাকে বিক্রি হতে দেব না। ওরা সংবাদ মাধ্যমকে ভয় দেখাচ্ছে। সমীক্ষার রিপোর্ট বদলে দিচ্ছে। ওদের প্রচুর টাকা। কিন্তু ওরা সব ফেক। বিজেপি মিথ্যা কথা বলে, কুৎসা করে, চক্রান্ত করে, সেই চক্রান্তের কাছে আপনারা কখনো মাথা নত করবেন না."
এরপর মমতা নন্দীগ্রামে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন নন্দীগ্রাম থেকে আমি দাঁড়ালে কেমন হয় ?" পরে তিনি বলেন, "নন্দীগ্রাম আমার মনের জায়গা, আমার ভালবাসার জায়গা। সুব্রত বক্সীকে অনুরোধ করছি নন্দীগ্রাম থেকে আমার নাম প্রার্থী হিসেবে লিখে নিন।" আবার নন্দীগ্রামের পাশাপাশি ভবানীপুর থেকেও তিনি ভোটে দাঁড়াতে পারেন। জনসভার শেষে মমতা বলেন, "আমাকে এতদিন কাজ করতে দিত না। আমি টাকা দিতাম, অন্য কেউ কাজগুলো করে দিত। এখন আমি নিজেই সব কিছু দেখছি, সব কাজ করছি। আমাকে তো রাজ্যের সব আসন থেকেই লড়তে হবে !"