আজ খবর (বাংলা), কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ১৯/১২/২০২০ : আজ কলকাতার তৃণমূল ভবন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারীকে এক হাত নিলেন তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণবাবু আজ বিজেপির বিরুদ্ধেও ব্যাপকভাবে সুর চড়ালেন।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সাংবাদিক ,বৈঠকে বলেন, "অমিত শাহ, আপনি পরিবার তন্ত্রের কথা বলছেন ? আপনি বলুন, অধিকারী পরিবারে রাজনীতির পরিবার তন্ত্র নেই ? কি কোয়ালিটি ছিল যে আপনার ছেলে বিসিসিআই-এর সম্পাদক হয়ে গেল ? বিজেপি দলেই এখন পরিবার তন্ত্র ঢুকে গিয়েছে। আপনারা কেন ব্যক্তিগত আক্রমন করছেন ? কেন মিথ্যা আবর্জনা ছড়াচ্ছেন ? আমি পরিস্কার করে জানিয়ে দিতে চাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে আগ্রহী নন। মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছে বাংলার মানুষ। একের পর এক আন্দোলন করে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।লাখো লাখো মানুষ ছুটে গিয়েছেন মমতার জন্যে। শুভেন্দু যদি এত বড় নেতা, তাহলে পরপর ভোটে হেরেছিলেন কেন ?"
এরপর বিজেপিকে আক্রমন করে কল্যাণবাবু বলেন, "বিজেপি পার্টি দেশের সব টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। বিরোধীদের হুমকি দিচ্ছে, লোভ দেখাচ্ছে। ৩টি কৃষি বিলের জন্যে গোটা ভারতের কৃষক সমাজ উত্তাল হয়ে উঠেছে। আপনারা (বিজেপি) কৃষক বন্ধু নন। কৃষকের বাড়িতে খেতে গেলেই কৃষক বন্ধু .হওয়া যায় না। এই আন্দোলন দেখে নীল বিদ্রোহের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আপনারা বড় বড় সংস্থা আর এজেন্সির কাছে কৃষি নীতি বেচে দিয়েছেন। আজকের সভায় বাংলার অনেক বড় বড় মনীষীর নাম নিয়েছেন, এই মানুষদের জীবনীর একটা চ্যাপ্টারও যদি পড়তেন, তাহলে ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় আপনাদের নাম জড়াত না।"
সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীকে আজ ব্যাপকভাবে আক্রমন করেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, "গত ১০ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রণাম করেছেন। আপনি কি করে বলেন দলটা পিছে গিয়েছে ? তাহলে এতদিন আপনি বলেন নি কেন ? সব ভোগ করতে হবে ? কি সন্মান আপনাকে দেওয়া হয় নি ? ৩ দপ্তরের মন্ত্রীত্ব, বিভিন্ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ, বিভিন্ন জেলার পর্যবেক্ষকের পদ, সব পেয়েছিলেন। আরও চাই ? মুখ্যমন্ত্রীর আসন না পেলে কি চলছিল না ? হলদিয়া, মেদিনীপুর, কনটাই এইসব জায়গাগুলোর কন্ট্রাক্টরদের রাজার রাজা কে ছিল, তা সবাই জানে। আপনি এতদিন দলে ছিলেন কেন ? এতদিন কি ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলে গিয়েছিলেন ?"
কল্যাণবাবু শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে আক্রমন শাণিয়ে বলেন, "আপনি বুলেট প্রুফ গাড়ি আর সিআইএসএফ নিরাপত্তা নিয়ে নন্দীগ্রামে নিজের কেন্দ্র পরিবর্তন করবেন না। আমরা দেখিয়ে দেব। সেখানে আকাশ থেকে মাটি সর্বত্র একটাই আওয়াজ শুনবেন, মমতা, মমতা, মমতা। মেদিনীপুরের কলেজ মাঠ আমি খুব ভাল চিনি, ওখানে ছোটবেলায় আমি ফুটবল খেলেছি। আপনারা ওই মাঠও আজ ভরাতে পারেন নি। আজ দিলীপ ঘোষ যেই বলতে শুরু করলেন অমনি সবাই মাঠ থেকে বের হতে শুরু করলেন, যেই না অমিত শাহ দুই চার লাইন বলছেন, সঙ্গে সঙ্গে সবাই মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলেন। যার জন্যে তাঁকে বলতে হল, 'জরা শুনো ভাইয়া' (একটু শুনুন ভাই)। মাঠে যারা ছিল তারা সবাই ছিল বাইরের লোক, কেউ মেদিনীপুরের লোক ছিল না। মেদিনীপুরের লোক বুঝে গিয়েছে আপনি কাপুরুষ, আপনার কোনো আদর্শ নেই। আপনার বুকের পাটা নেই। তাই সাহস করে আপনি ভাইপোর নামটুকুও নিতে পারলেন না। আপনার কোনো আদর্শ নেই। মেদিনীপুরের মাটিতে এতবড় বেইমান, বিশ্বাসঘাতকের জন্ম হয় ?"
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৃণমূল যে এতটুকুও শঙ্কিত নয়, তা বুঝিয়ে দিয়ে কল্যাণবাবু বলেন, "গত ১০ বছরে প্রচুর প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে গিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে মমতা ২০০রও বেশি আসন পাবেন, আর আপনারা (বিজেপি) ৫০টা আসনও পাবেন না। আগামী নির্বাচনে মমতা জিতবে এবং তৃতীয়বারের মত সরকার গড়বে। কেননা লক্ষ লক্ষ মানুষ মমতাকে দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করেন। আপনারা যতই ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মত রাজ্যের সর্বত্র ঘুরে বেড়ান না কেন। আমরা তৈরি আছি। তৃতীয়বারের মত মমতাকেই মুখ্যমন্ত্রী করব, এটা আমার চ্যালেঞ্জ রইল।"