আজ খবর (বাংলা), কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ১৫/১১/২০২০ : চলে গেলেন ফেলুদা, চলে গেলেন বাংলা সিনেমার মহা তারকা। ৪১ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জি। শেষ হল বাংলা সিনেমার একটি স্বর্ণ যুগ। তাঁর প্রয়ানে অপূরণীয় ক্ষতি হল বাংলা চলচ্চিত্র জগতের।
গত মাসের ৬ তারিখ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অসুস্থ অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জি। বয়স জনিত অসুস্থতা ও করোনা সংক্ৰমন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলা সিনেমার অন্যতম মাইলস্টোন সৌমিত্র চ্যাটার্জি। গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রীতিমত পাঞ্জা কষছিলেন মৃত্যুর সাথে। আপামর বাঙালি তাঁর আরোগ্য কামনা করেছিলেন, কিন্তু আজ দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে সবকিছুকে বিফল করে দিয়ে চলে গেলেন সৌমিত্রবাবু। ক্ষিদদা আর নতুন করে ফাইট করলেন না।
সৌমিত্র চ্যাটার্জি জন্মগ্রহন করেছিলেন ১৯৩৫ সালের ১৯শে জানুয়ারি কলকাতায়। সারা জীবন অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করে গিয়েছেন। করেছেন মঞ্চাভিনয়। বাচিকশিল্পী হিসেবেও পেয়েছিলেন অসামান্য সুখ্যাতি। একজন লেখক, কবি এবং নির্দেশক হিসেবেও পেয়েছিলেন ব্যাপক স্বীকৃতি। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় ফেলুদা হিসেবে শুধু বাঙালিই নয়, তাঁকে মনে রাখবেন গোটা দেশ। তাঁর অভিনীত কোনির ক্ষিদদা চরিত্র আজও ভাল লাগায়। এছাড়াও অপরাজিত, অপুর সংসার, অভিযান, চারুলতা, স্ত্রী, সন্ন্যাসী রাজা, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, ঘরে বাইরে ,শাখা প্রশাখা, গনশত্রু, আকাশ কুসুম, ক্ষুধিত পাষান, ঝিন্দের বন্দী, অতল জলের আহ্বান, সাত পাকে বাঁধা, পরিণীতা, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা এরকম অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করে বাংলা সিনেমাকে দশকের পর দশক ধরে সমৃদ্ধ করে গিয়েছেন বাংলা সিনেমার মাইলস্টোন সৌমিত্র চ্যাটার্জি।
সৌমিত্রবাবু ২০০৪ সালে পেয়েছিলেন পদ্মভূষণ সন্মান, ২০০৬ সালে পেয়েছিলেন ন্যাশনাল ফিল্ম এওয়ার্ড, ২০১২ সালে তিনি পেয়েছিলেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার এবং ২০১৮ সালে তিনি পেয়েছিলেন লিজিয়ন অফ অনার এওয়ার্ড। এছাড়াও সারাজীবন অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন সৌমিত্রবাবু। তবে তাঁর জীবনে সবচেয়ে বেশি যে পুরস্কার তিনি পেয়েছিলেন, তা হল অগণিত বাঙালির ভালবাসা। একসময় মহানায়ক উত্তমকুমারের সমকক্ষ হিসেবে তুলনা করা হত সৌমিত্রবাবুকে। প্রতিটি বাঙালি মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
আজ বেলভিউ হাসপাতাল থেকে দুপুর দুটো নাগাদ সৌমিত্রবাবুর মরদেহ প্রথমে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর গল্ফ গ্রীনের বাসভবনে। সেখানে তাঁর স্ত্রীর অপেক্ষা করে আছেন, বাবার মরদেহ সেখানে মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন মেয়ে পৌলমী। তারপর সেখান থেকে সৌমিত্রবাবুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওতে, সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রবীন্দ্র সদনে। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ। এরপর বিকেলবেলায় সৌমিত্রবাবুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। সেখানে রাজ্য সরকার তাঁকে গান স্যালুট দেবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে. চিরতরে পঞ্চভূতে মিলিয়ে যাবে সকালের প্রিয় অপরাজিত অপু।