নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি |
আজ খবর (বাংলা), কাঠমান্ডু, নেপাল, ১৮/১১/২০২০ : কমিউনিস্ট পার্টি এনসিপি পরিচালিত নেপাল সরকারে ফাটল ক্রমেই বাড়ছে, তার মধ্যেই বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করতে চলে এল চীনা রাষ্ট্রদূত।
নেপাল সরকারে মতপার্থক্যের চির ধরেছিল আগেই, সেই চির এবার ফাটলে পরিণত হয়েছে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কুমার দহলের (প্রচন্ড) মধ্যে সম্পর্কের ফাটল আরও চওড়া হচ্ছে। পুষ্প কুমার দহল ওলির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, যে ওলি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রশাসনের কাজ করে যাচ্ছেন। প্রশাসন যেভাবে চালানোর কথা তা তিনি করছেন না। তিনি যে সব অঙ্গীকার করেছিলেন, সে সব কিছুই তিনি পূর্ণ করেন নি, দলের ম্যানুফেস্টোতে যা কিছু বলা ছিল, তা তিনি পালন করেন নি, দলীয় নির্দেশও তিনি মানছেন না। শুধু তাই নয়, দেশে করোনা ভাইরাসের সঙ্কটের সময় তিনি এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন নি, যাতে দেশের মানুষের প্রাণ বাঁচে বা সংক্ৰমন কম হয়। তিনি নানারকম অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছেন। এতে দেশ ও সমগ্র জাতির ক্ষতি হচ্ছে।
এই বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণও প্রচন্ড প্রস্তুত করেছেন এবং সেগুলির কপি পাঠিয়েও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ওলির কাছে এবং দাবী করেছেন ওলির আর কোনোমতেই প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই। এই কারণে প্রচন্ড ওলির সাথে একটি দলীয় বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারন দেখিয়ে ওলি প্রচন্ডের সাথে সেই দলীয় বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন। কেননা ওলি খুব ভাল করে জানেন প্রচন্ডের কাছে যে তথ্য রয়েছে, তা প্রকাশ্যে চলে এলে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর গদি হয়ত ছাড়তেই হবে।
এই জায়গাতেই শাসক দল এনসিপি বিভক্ত হয়ে রয়েছে দুই ভাগে। এনসিপির শাসক দলের ৯ সদস্যের ক্যাবিনেট সেক্রেটারির মধ্যে চার জন রয়েছেন ওলির দিকে আর পাঁচ জন আছেন প্রচন্ডর দিকে। ওলির দিকে আছেন বিষ্ণু পৌডেল , ঈশ্বর পোখরেল, রাম বাহাদুর থাপা এবং ওলি নিজে। উল্টোদিকে রয়েছেন মাধব নেপাল, ঝলনাথ কানাল , বামদেব গৌতম, নারায়ণ কাজী শ্রেষ্ঠ এবং পুষ্প কুমার দহল প্রচন্ড নিজে।
পুস্প কুমার দহল প্রচন্ড |
দলীয় বৈঠক এড়াতে ওলি মন্ত্রীসভার বৈঠক ডাকলে প্রচণ্ডের দিকের পাঁচজনই অনুপস্থিত থাকেন তিহার চলার কারন দেখিয়ে। এদিকে প্রচন্ডের ডাকা আজ দুপুর ১টার বৈঠকেও গরহাজির থাকেন ওলির দিকের চারজন। তবে ওলি সমঝোতার জন্যে বিষ্ণু পৌডেলকে প্রচন্ডর কাছে পাঠান সমস্যা সমাধানের এবং প্রচন্ডের কাছে থাকা তথ্য প্রমাণ উদ্ধারের জন্যে, কিন্তু কোনো সুরাহার পথ দেখতে পাননি পৌডেল। এরপর দুই শিবিরের তিক্ততা আরও চরমে চলে এসেছে।
দুই শিবিরের মনোমালিন্য যখন চরমে উঠেছে, ঠিক তখনই আসরেই নামতে দেখা গেল নেপালে থাকা চীনের রাষ্ট্রদূত হৌ ইয়ানকিকে। বিশেষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, তিনি হঠাৎ করেই সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী ওলির সাথে এবং তাঁদের গোপন বৈঠক চলে অন্তত দুই ঘণ্টা ধরে। যদিও বলা হচ্ছে, ইয়ানকি এনসিপির দলীয় কোন্দল মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দিতেই নাকি এসেছিলেন। কিন্তু দলীয় কোন্দল মেটানোর জন্যে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ কেন ? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায় নি।গোটা বিষয়টির ওপর নজর রাখছে দিল্লীর সাউথ ব্লকও। কি হতে চলেছে নেপালের আন্ডারে ? প্রতিবেশী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিভেদের জন্যে ভারতের ওপর কি প্রভাব পড়তে চলেছে, ফের একবার চীন নেপালকে প্রভাবিত করবে কিনা, আর যদি করেও তাতে ভারতের কি কি সমস্যা হতে চলেছে, সেই দিকে নজর রাখবে আজ খবরও।