আজ খবর (বাংলা), জয়সলমীর , রাজস্থান, , ১৪/১১/২০২০ : "সেনা জওয়ানদের মধ্যে থাকতে না পারলে আমার দীপাবলি অসম্পূর্ণ" আজ লঙ্গেওয়ালা সীমান্ত চৌকিতে পৌঁছে বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সেনাবাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলিতে সময় কাটানোর ঐতিহ্য বজায় রেখে লঙ্গেওয়ালায় ভারতীয় সীমান্ত চৌকিতে সেনানীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, তাঁর দীপাবলি তখনই পরিপূর্ণতা পায় যখন তিনি তুষারাবৃত পাবর্ত্য এলাকায় বা মরুভূমিতে মোতায়েন সেনাদের সঙ্গে সময় কাটান। সীমান্তে মোতায়েন সেনার কাছে তিনি প্রত্যেক ভারতীয়ের শুভেচ্ছা, আর্শীবাদ ও শুভকামনা পৌঁছে দেন। শ্রী মোদী, সেনা জওয়ানদের নির্ভীক মা ও বোনেদের শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁদের আত্মোৎসর্গের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেনাবাহিনীর প্রতি দেশবাসীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৩০ কোটি ভারতীয় তাদের পাশে অটলভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, কেবল সেই দেশই সুরক্ষিত ও নিরাপদ হতে পারে, যার আক্রমণকারী ও অনুপ্রবেশকারীদের মুখোমুখি হওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় অগ্রগতি ও সমীকরণে পরিবর্তন নির্বিশেষে, “আমরা কখনই ভুলতে পারি না যে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার মূল ভিত্তি হল সদা সতর্কতা, আনন্দের ভিত্তি হল বিচক্ষণতা ও মনসংযোগ এবং অন্তর্নিহিত শক্তি হল যে কোনো পরিস্থিতিকে জয় করার আত্মবিশ্বাস। ”
প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী সুস্পষ্ট জানান যে, ভারতের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আজকের ভারত বোঝাপড়ায় এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যায় বিশ্বাস করে। অবশ্য আমাদের সংযমের যদি কোনো পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে তার প্রহারও হবে সমান ও সমুচিত।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আজ সমগ্র বিশ্ব একথা জানে যে ভারত, তার জাতীয় স্বার্থে কোনো ভাবেই কোনো পরিস্থিতিতেই আপস করবে না। ভারতের এই আত্মসম্মান ও মর্যাদা তার সক্ষমতা ও সাহসীকতার দরুণ অর্জিত হয়েছে। ভারত, আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিতে তার সক্ষমতা যথার্থভাবে তুলে ধরতে পেরেছে। কারণ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সুনিশ্চিত নিরাপত্তার আশ্বাস পাওয়া গেছে। ভারতের সামরিক শক্তি তার আলোচনার দক্ষতাও বাড়িয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন। আজ ভারত জঙ্গি কারবারিদের আস্তানায় গিয়ে আঘাত করে আসছে।
ভারত, সম্প্রসারণবাদের আদর্শের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে। আজ সমগ্র বিশ্বই সম্প্রসারণবাদ শক্তির কাছে আশঙ্কায় ভুগছে। আসলে সম্প্রসারণবাদের এই রীতি – নীতি অষ্টাদশ শতাব্দীর চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটায় বলে শ্রী মোদী উল্লেখ করেন।
আত্মনির্ভর ভারত তথা ভোকাল ফর লোকাল নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ১০০টিরও বেশি অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম আর আমদানী করা হবে না। এই প্রেক্ষিতে শ্রী মোদী দেশীয় সামগ্রির ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর নীতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
শ্রী মোদী, দেশের যুবসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সেনাবাহিনীর চাহিদা পূরণে আরো বেশি স্টার্টআপ সংস্থা গড়ে তুলতে তাদের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যুবসম্প্রদায়ের অগ্রণী নেতৃত্বে গঠিত স্টার্টআপগুলি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশকে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার লক্ষ্যে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আজ সমগ্র দেশ মহামারীর সময় প্রতিটি নাগরিকের জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নাগরিকদের জন্য অন্যের সুনিশ্চিত সংস্থানের পাশাপাশি সমগ্র দেশ অর্থনীতিতে পুনরায় গতি সঞ্চারে কাজ করে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রথমত, উদ্ভাবনকে দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ করে তোলার পরামর্শ দেন। দ্বিতীয়ত, যোগচর্চাকে দৈনন্দিন জীবনে সামিল করার পরামর্শ দেন এবং তৃতীয়ত, মাতৃভাষা হিন্দি বা ইংরাজীর পাশাপাশি অন্ততপক্ষে আরো একটি ভাষা শেখার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ৩টি বিষয় আত্মস্থ করতে পারলে জীবনে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চারিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী লঙ্গেওয়ালার গৌরবময় লড়াইয়ের কথা স্মরণ করে বলেন, এই লড়াই চিরকাল কৌশলগত পরিকল্পনা ও সামরিক অভিযানে সাহসীকতার কাহিনী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, লঙ্গেওয়ালায় এই লড়াইয়ের সময় পাকিস্তানের কুৎসিত ও কাপুরুষোচিত চরিত্রের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। তৎকালীন পাক বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ সাধারণ মানুষের জীবনে ভীতির সঞ্চার করেছিল। এমনকি এই বাহিনী বর্বরতার আরো একটি জঘন্য দৃষ্টান্ত রেখে বাংলাদেশের মা-বোনেদের ওপর নির্বিচারে অভব্য আচরণ করেছিল। পাকিস্তান, পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকার সম্মুখভাগ খুলে দিয়েছিল কারণ তাদের উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি সেদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। কিন্তু আমাদের বাহিনী তাদের এই অপচেষ্টার জন্য সমুচিত জবাব দিয়েছিল।