আজ খবর (বাংলা), নতুন দিল্লী , ভারত, ০৯/১০/২০২০ : প্রতি বছর ভারতীয় উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত হানার ফলে আর্থিক ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের লক্ষ্যে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর চলতি মরশুমে খুব শীঘ্রই ঘূর্ণিঝড়ের গতি ও প্রভাব সম্পর্কিত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থাপনা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করতে চলেছে বলে জানিয়েছেন, ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের মহানির্দেশক ডঃ মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র। ৬ই অক্টোবর বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ উদযাপনের অঙ্গ হিসাবে দিল্লির ইন্ডিয়ান সোশ্যাইটি অফ রিমোর্ট সেন্সিং আয়োজিত ‘চেজিং দ্য সাইক্লোন’ শীর্ষক আলোচনায় একথা জানিয়েছেন তিনি।
ডঃ মহামাত্র বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিশ্ব জুড়ে পরিকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ভারতে ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সঙ্গে তালমিলিয়ে চলতে সম্পত্তি, পরিকাঠামোগত এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের লক্ষ্যে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি মরশুম থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে বলেও তিনি জানান। নতুন এই ব্যবস্থাপনায় উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষজনকে আগাম সতর্কতা প্রদান করা সম্ভব হবে।এর ফলে পরিকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান। একই সঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলি আগাম সতর্কতা হিসাবে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা মোকাবিলা সংস্থা 'ন্যাশনাল সাইক্লোন রিস্ক মিটিগেশন প্রোজেক্ট' নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা সংস্থা উপকূলীয় রাজ্যগুলি এবং ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের সহায়তায় একটি ওয়েব-ভিত্তিক 'ডায়ানামিক কম্পোজিট রিস্ক অ্যাটলাস' ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে।
এই আলোচনা সভায় যোগ দেওয়ার আগে ডঃ মহাপাত্র ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর আয়োজিত প্রাক্-ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুমে প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহের বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করেন। এই বৈঠকে আবহাওয়া দপ্তরের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভাগ করে নেন।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর ৬ই অক্টোবর অনলাইন-ভিত্তিক প্রাক-ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্তুতিমূলক সভার আয়োজন করে। এই সভায় পৌরহিত্য করেন ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের মহানির্দেশক ডঃ মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র। সভায় তিনি অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুমে আগাম প্রস্তুতি, আবহাওয়া দপ্তরের নতুন উদ্যোগ এবং প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহের বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে পর্যালোচনা করেন। বৈঠকে আবহাওয়া দপ্তর ছাড়াও ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট, ভারতীয় বিমান বাহিনী, নৌ-বাহিনী, কেন্দ্রীয় জল কমিশন, দিল্লির ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান ইনফরমেশন সার্ভিসেস, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা সংস্থা, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, মৎস্য, ভারতীয় রেল দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উদ্বোধনী ভাষণে ডঃ মহাপাত্র ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আবহাওয়া দপ্তরের নতুন উদ্যোগের বিষয়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। সভায় উপস্থিত সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে তিনি জানান, ভারী বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, প্রতিকূল আবহাওয়ার মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম সতর্কতায় আবহাওয়া দপ্তর প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নতি করেছে। বজ্রপাতের পূর্বাভাসের জন্য ‘দামিনী’ আবহাওয়া ও ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতার জন্য ‘মৌসম’ এবং ‘উমঙ্গ’ ও কৃষকদের সঠিক পরামর্শদানের জন্য ‘মেঘদূত’ অ্যাপ চালু করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। শ্রী মহাপাত্র বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা সম্পর্কিত তথ্য পাওয়ার জন্য আবহাওয়া দপ্তরের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে বিনামূল্যে নাম নথিভুক্ত করালে সময় মতো তথ্য পাওয়া যাবে।ডঃ মহাপাত্র বলেন অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে যাতে ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। জীবনহানী ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের অন্তর্গত ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস বিভাগের প্রধান শ্রীমতী সুনীতা দেবী সাম্প্রতিককালে ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস বিভাগের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। একই সঙ্গে, ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন। সভায় অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষই ঘূর্ণিঝড় আগাম সতর্কতা ব্যবস্থাপনার জন্য ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে।