আজ খবর (বাংলা), মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ০২/০৯/২০২০ : এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসার যোগাড় ! প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্যের তদন্ত করতে গিয়ে মুম্বইয়ের ড্রাগস চক্রের তদন্ত শুরু হয়ে গেল, এমনকি সুশান্তের ম্যানেজার দিশা সালিয়ানের মৃত্যু রহস্যের তদন্ত প্রসঙ্গটিও সামনে চলে আসছে।
গত ১৯শে আগস্ট সুপ্রীম কোর্ট সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে সিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেইমত আগস্ট মাসের ২০ তারিখ থেকে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। সুশান্তের মৃত্যুর সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে প্রতিদিন। এর মধ্যেই এই তদন্তের মূল অভিযুক্ত সুশান্ত সিং রাজপুতের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী এবং তার ভাই সৌভিক চক্রবর্তীকে দফায় দফায় জেরা করছেন সিবিআইয়ের দুঁদে অফিসাররা।
রিয়া ও শৌভিককে জেরা করে এবং হোয়াটস আপ চ্যাট থেকে তাদের ড্রাগস চক্রের সাথে সংযোগ থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। সেই কারণেই চ্যাটের উল্টো দিকে থাকা গৌরব আর্য্য নামে একজনকে গোয়া থেকে মুম্বই এসে সিবিআইয়ের মুখোমুখি বসতে হয়েছে। এবার সেই গৌরব আর্য্য রিয়ার সহযোগী স্যামুয়েল মিরান্ডার নাম সিবিআইকে জানিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ গৌরব এই স্যামুয়েলকে নিয়মিত ড্রাগস সাপ্লাই করত বলে জানা যাচ্ছে। সৌভিক চক্রবর্তীর কথাতেই সেই ড্রাগস স্যামুয়েল সংগ্রহ করত বলে সিবিআইকে জানিয়েছে স্যামুয়েল মিরান্ডা।
সিবিআইয়ের পাশাপাশি মুম্বইয়ে ড্রাগস নিয়ে তদন্ত করছে কেন্দ্রের নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো। আজ তারা মুম্বইয়ের বান্দ্রা থেকে আবদুল বাসিত পরিহার নামে একজন ড্রাগস ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। একই তদন্তে উঠে এসেছে জাইদ ভিলাত্রা নামে মুম্বইয়ের আর এক ড্রাগস কারবারির নাম। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকেও। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কেন সৌভিক বা তার বোন রিয়া চক্রবর্তী এই ড্রাগস কারবারিদের সাথে যোগাযোগ রাখে ? কেনই বা সুশান্তের ফোন ব্যবহার করে রিয়া 'এমডি' নামে নিষিদ্ধ ড্রাগসের খোঁজ করছিল ? রিয়া কি নিজেও ড্রাগস নিত, নাকি সেই ড্রাগস গোপনে খাওয়াত সুশান্তকেও ? রিয়া কি নিজেই এই ড্রাগস কারবারে যুক্ত ছিল ? এই প্রশ্নগুলোই বেশি করে ভাবাচ্ছে সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদেরকে। ড্রাগস নিয়ে নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো যেভাবে তদন্ত চালাচ্যেছে,তাতে ক্রমেই প্রকাশ্যে আসতে চলেছে বলিউডের কিছু অতি পরিচিত মুখও।
এদিকে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর কিছুদিন আগেই রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছিলেন সুশান্তের ম্যানেজার দিশা সালিয়ান। একটি অভিজাত আবাসনের ১৪ তলা থেকে তাঁর রক্তাক্ত নগ্ন দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল আবাসনের পার্কিং লটে । অথচ দিশার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ১৪ তলার সেই ফ্ল্যাটে পার্টি হচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। মৃত্যুর আগে দিশা ফোন করে সুশান্তকে কিছু কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন। সুশান্ত সেই ব্যাপারে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সবকিছু প্রকাশ্যে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সাংবাদিক বৈঠকের একদিন আগেই তাঁর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছিল।
সুশান্তের মৃত্যুর পর প্রায় আড়াই মাস কেটে গিয়েছে। মুম্বই পুলিশ জানিয়েছিল সুশান্ত সিং রাজপুত আত্নহত্যা করেছিলেন, কিন্তু পুলিশের দেওয়া বক্তব্যের পরেও দেশজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। সুশান্তের আত্মহত্যা দেশের মানুষ মেনে নিতে পারেন নি। এরপর ইডি এবং এখন সিবিআই এই তদন্ত করছে। দেশের মানুষ চাইছেন যেন তাঁদের প্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত ন্যায় বিচার পান এবং অপরাধীরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।