আজ খবর (বাংলা), কলকাতা, ০২/০৩/২০২০ : গতকাল কলকাতার শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে আমিত শাহের জনসভাকে ঘিরে বাগবিতণ্ডায় মেতে উঠল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
আজ নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দলের কর্মিসভায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লীর অশান্তির ঘটনায় সুর চড়িয়েছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, "দিল্লীর অশান্তি পূর্ব পরিকল্পিত, পরে এটাকে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা নাম দেওয়া হয়েছে।এই ঘটনার ধিক্কার জানাই। "মমতা দলের সাংসদ বিশেষ করে ডেরেক ও ব্রায়ান, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়দের নির্দেশ দেন, "আমি ওঁদের বলব যাতে দিল্লী ফিরে গিয়ে তারা একটা তহবিল তৈরী করে এবং সংঘর্ষ পীড়িত মানুষদের সাহায্য করে। আমরা ভিক্ষা চাই না। পাঁচ পয়সা হলেও দেব, পঞ্চাশ পয়সা হলেও দেব, আমরা দুমুঠো খেলে ওদের এক মুঠো ভাত দেব।দিল্লী থেকে প্রাণ নিয়ে যাঁরা পালিয়ে গিয়েছেন, তাঁরা যদি চান তাহলে পশ্চিমবাংলায় এসে নিরাপদে থাকতে পারেন, আপনাদের জন্যে বাংলার দরজা খোলা রয়েছে।"
দিল্লীর হিংসার প্রতিবাদে আজ কংগ্রেস ও সিপিএম সহ প্রায় ২০টি দল কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কয়ার থেকে বিশাল মিছিল করে মহম্মদ আলী পার্ক পর্যন্ত যায়। সেই মিছিলে পা মিলিয়েছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী সোমেন মিত্র সহ অন্যান্য প্রথম সারির নেতারা। সেই মিছিল থেকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেন, "এতদিন পর ওনার ঘুম ভাঙল ? দিল্লিতে এতকিছু ঘটে গেল, এত মানুষের মৃত্যু হল, আর উনি চুপ করে রইলেন, প্রায় ১০ দিন কেটে যাওয়ার পর উনি বুঝতে পারলেন দিল্লীর হাঙ্গামা আসলে পূর্ব পরিকল্পিত ছিল ?" এদিন বিমান বসুর দিল্লীর হাঙ্গামার ঘটনার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আজ দিল্লী থেকে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, "ওনার যদি মনে হয়েছিল যে এটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল, তাহলে দুদিন আগেই উনি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলেন ভুবনেশ্বরে, একসাথে বৈঠক করলেন, একসাথে খাওয়া দাওয়া করলেন, তাহলে তখনি তাঁকে জানালেন না কেন ? এখন হঠাৎ করে এই ধরনের কথা বলছেন কেন ?"
গতকাল অমিত শাহের জনসভায় যাওয়ার পথে কয়েকজন বিজেপি সমর্থক স্লোগান দিয়েছিলেন 'দেশকে গদ্দারকো গোলি মারো'। এই ঘটনায় পুলিশ বিজেপির তিন সমর্থককে তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছিল। এই তিনজনকে আজ ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাঁদের মধ্যে কম বয়স থাকায় শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয় ধ্রুব বসুকে, বাকি দুজনকে দুদিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বিজেপির এই স্লোগান সম্পর্কে আজ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইনডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে বলেন, "এটা দিল্লী নয়, এটা কলকাতা, এটা বাংলা। এখানে এসব উস্কানিমূলক কথাবার্তা চলে না। কে দেশের গদ্দার ? কে ঠিক করবে সেটা? আপনারা না মানুষ ?"
মমতার এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী বলেন, "বিজেপি এখন পকেটে করে দিল্লী থেকে উস্কানি নিয়ে এসে বাংলায় ছড়াতে চাইছে। বাংলাকে অশান্ত করে তুলছে। এটা সম্ভব হচ্ছে একমাত্র মমতার জন্যে, এটা হচ্ছে যেহেতু এই রাজ্যে শাসন চালাচ্ছে তৃণমূল। এটা যদি জ্যোতি বসুর আমল হত, বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের আমল হত তাহলে ওরা কখনোই এত সাহস পেত্ না, মমতার আমলেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এত বাড়বাড়ন্ত হয়েছে।উনি বাংলার গর্ব নন, উনি বাংলার বিপদ, বাংলার সঙ্কট।"
'গোলি মারো' স্লোগান প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেছেন, "পশ্চিম বাংলা এখন পশ্চিমবাংলাদেশ হওয়ার লক্ষে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এখানে যখন গাড়ি পুড়ল, ট্রেন পুড়ল, তখন কেউ অপরাধী হল না, এখানে যখন 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান ওঠে, 'দেশকে হাজার টুকরো হোঙ্গে' স্লোগান ওঠে তখন কারোর কোনো দোষ হয় না, আর গোলি মারো স্লোগান দিলেই তা দোষের হয়ে যায়। দেশের বেঈমান বা গদ্দারদের গোলি মারো বলবে, না তো কি বলবে ? মীরজাফর, জয়চাঁদদের কি করা উচিত ছিল ? এবার তো তাহলে কামান দাগার স্লোগান তুলতে হয় ! বিজেপির তরফ থেকে এই ঘটনায় হাইকোর্টে মামলা করা হবে এবং মিথ্যা মামলা দেওয়ার জন্যে দোষী পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে.।"
Loading...