আজ খবর(বাংলা), কলকাতা, ২৮/০৩/২০২০ : জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) গত ২৪শে মার্চ এক নির্দেশ জারি করে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও দপ্তর সহ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত প্রশাসনগুলিকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ সংক্রমণকে মহামারী হিসাবে ঘোষণা করেছে। এনডিএমএ – এর এই নির্দেশ অনুযায়ী, জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন হিসাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৫ – এর সংশ্লিষ্ট ধারানুযায়ী, এক নির্দেশ জারি করেন।
এই নির্দেশ অনুযায়ী, নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে কার্যকর করা ও মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে :
· ভারত সরকারের সমস্ত কার্যালয়, স্বশাসিত বা সাব-অর্ডিনেট কার্যালয় এবং জনসংযোগ কার্যালয়গুলি বন্ধ থাকবে। তবে প্রতিরক্ষা, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী, ট্রেজারি, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন – পেট্রোলিয়াম, সিএনজি, এলপিজি সহ ভারতীয় খাদ্য নিগম, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ইউনিট, ডাকঘর, এনআইসি এবং আগাম সতর্কবার্তা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে এই নির্দেশের আওতার বাইরে রাখা হবে।
· সমস্ত রাজ্য সরকারি কার্যালয়, স্বশাসিত সংস্থা, পরিষদ বা নিগম প্রভৃতি কার্যালয় বন্ধ থাকবে। তবে পুলিশ, হোমগার্ড, অসামরিক প্রতিরক্ষা, অগ্নিনির্বাপন ও জরুরি পরিষেবা, সংশোধনাগার, জেলা প্রশাসন ও ট্রেজারি, বিদ্যুৎ, জল ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রগুলিকে নির্দেশের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
· উৎপাদন ও বন্টন ইউনিটগুলি সহ সমস্ত রকম চিকিৎসা পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলির কাজকর্ম অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র, ওষুধপত্রের দোকান, গবেষণাগার, নার্সিং হোম এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও চালু থাকবে। চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, আধা-চিকিৎসক এবং হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য পরিষেবাদাতাদের ঐ নির্দেশের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
· যাবতীয় নির্মাণ কাজ সহ বাণিজ্যিক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য, জেলা বা স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি বিবেচনা করে হোম ডেলিভারী পরিষেবাকে ছাড় দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করতে পারে। এছাড়াও, ব্যাঙ্ক, বিমা কার্যালয়, এটিএম, মশলাপাতি, ফল ও শাক-সব্জি, ডেয়ারি, মাংস ও মাছ, পশুখাদ্য প্রভৃতিও ঐ নির্দেশিকার বাইরে রয়েছে।
একইভাবে, মুদ্রণ ও বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম, টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট পরিষেবা, সম্প্রচার ও কেবলটিভি পরিষেবা, তথ্য প্রযুক্তি ও তথ্য প্রযুক্তি-নির্ভর অত্যাবশ্যক পরিষেবাগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে, প্রয়োজন-ভিত্তিতে বাড়ি থেকে কাজ করার পরামর্শও রয়েছে।
খাদ্য সামগ্রী, ওষুধপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম সহ যাবতীয় অত্যাবশ্যক পরিষেবাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, পেট্রোল পাম্প, রান্নার গ্যাস, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ ও পরিবহণ, হিমঘর, মজুত ভান্ডার, বেসরকারি নিরাপত্তা পরিষেবাকে নির্দেশিকার বাইরে রাখা হয়েছে। অন্যান্য যাবতীয় প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম বাড়ি থেকে করতে হবে।
· যাবতীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। তবে, অত্যাবশ্যক সামগ্রী উৎপাদনকারী ইউনিটগুলি খোলা থাকবে।
· সরকারি ও বেসরকারি পরিবহণ পরিষেবা সহ বিমান, রেল, সড়ক পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে। তবে অত্যাবশ্যক সামগ্রী পরিবহণে ছাড় রয়েছে।
· আতিথেয়তা পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে, হোটেল, হোম স্টে, লজ ও মোটেলগুলি বন্ধ থাকবে।
· যাবতীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং টিউশন ক্লাসগুলি বন্ধ থাকছে।
· পূজার্চনার নামে কোনও ধরনের ধর্মীয় জমায়েতে অনুমতি দেওয়া হবে না।
· সমস্ত রকম সামাজিক, রাজনৈতিক, ক্রীড়া, বিনোদন, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং জমায়েত বাতিল করা হয়েছে।
· অন্তোষ্টির ক্ষেত্রে ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে এক জায়গায় জমায়েতে অনুমতি দেওয়া হবে না।
· যে সমস্ত ব্যক্তি ১৫ই ফেব্রুয়ারির পর ভারতে এসেছেন এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা যে সকল ব্যক্তিদের বাড়িতে বা প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যদি কোনও ব্যক্তি নিয়মভঙ্গ করেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
· যে প্রয়োজন সেখানেই সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একইভাবে, সংগঠন বা নিয়োগকর্তারা কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সেই সঙ্গে, স্বাস্থ্য দপ্তরের পরামর্শ মতো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সুনিশ্চিত করবেন।
· সমস্ত আইন বলবৎকারী কর্তৃপক্ষগুলিকে অত্যাবশ্যক পণ্য সামগ্রী বাদ দিয়ে মানুষের যাতায়াত সহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
· যদি কোনও ব্যক্তি নীতি-নির্দেশিকা লঙ্ঘন করেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আইনের পাশাপাশি, ভারতীয় ফৌজদারি বিধির ১৮৮ ধারানুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
· কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলি দেশের সমস্ত অংশে ২৫শে মার্চ থেকে ২১ দিনের জন্য কার্যকর করা হয়েছে।
Loading...