আজ খবর (বাংলা), নতুন দিল্লী, ২৯/০২/২০২০ : দিল্লীর হিংসায় ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪০ এরও বেশি মানুষ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আরও প্রচুর মানুষ এখনো পাঞ্জা লড়ছেন মৃত্যুর সাথে। কিন্তু অশান্তির এই আগুন কিভাবে শিশু মনকে প্রভাবিত করতে পারে তা দেখতে পাওয়া গেল দিল্লীর পাশাপাশি অবস্থিত দুটি স্কুলে গিয়ে।
দিল্লীর শিব বিহার অঞ্চলে পাশাপাশি রয়েছে রাজধানী পাবলিক স্কুল ও ডিআরপি স্কুল দুটি। এই দুই স্কুলেই হামলা চালিয়েছিল একদল দুষ্কৃতী। দুটি স্কুলই কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেই ধ্বংসস্তূপের ওপরেই ঘুরে ঘুরে নিজের আর বন্ধুদের নানান জিনিস পত্র খুঁজে বের করছিল ক্লাস ফাইভের পড়ুয়া ছোট্ট আরমান মালিক। ক্লাসরুমের ভিতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্তূপাকৃতি বই, খাতা, টিফিন বাক্স, জলের বোতল আরও কত কি! সাংবাদিক কাকুদের দেখে সে কেঁদে উঠল, বলল, "আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, এটা আমার স্কুল। দুস্টু লোকগুলো এসে আমাদের ক্লাসরুম, এসেম্বলি হল আর সব কিছু একেবারে ভেঙে দিয়ে গেছে, বুঝতে পারছি না, আবার কবে সব কিছু আগের মত করে শুরু হবে, আবার কবে স্কুল খুলবে।"
ছোট্ট আরমান চোখের জল কিছুতেই ধরে রাখতে পারছিল না, সে খালি কাঁদছিল, বলছিল "আমার বন্ধু রিয়াজ, রোহন, ফিয়াজ, সানিজাদের সাথে গত কয়েকদিন দেখা হয়নি। লাঞ্চের সময় আমরা একসাথে বসে নিজেদের টিফিন বাক্স খুলে সবাই খাবার ভাগ করে খেতাম।আমি আমার স্কুল আর বন্ধুদের খুব অভাব বোধ করছি।"
রাজধানী পাবলিক স্কুলের পাশেই রয়েছে ডিআরপি স্কুল। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মোট ১৪০০ শিশু পড়াশুনা করত.
এই স্কুলটির অবস্থাও একই রকম। দুষ্কৃতীদের গুন্ডাগিরিতে ধূলিস্যাৎ হয়েছে সব কিছু। এই স্কুলের এক শিক্ষিকা মীনাক্ষী শর্মা বলছিলেন, "জানি না কিভাবে ফের আমাদের বাচ্ছারা স্কুলে আসবে আর ফের পড়াশুনা শুরু করবে ? এখানে সব সম্প্রদায়ের শিশুরাই একসাথে পড়াশুনা করত, আর খেলা করত, কেউ কিভাবে শিক্ষার মন্দিরকে আক্রমন করতে পারে ! এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে দিল্লীর হিংসায় স্কুলগুলিকে এত ক্ষতিগ্রস্ত হতে হল। এইসব দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া উচিত।"
এই স্কুলের নিরাপত্তা রক্ষী মনোজ কালনি বলছিলেন সেদিনের কথা, তিনি বললেন, "সেদিন অন্তত ৫০০ জন গুন্ডা জোর করে স্কুলে ঢুকেছিল লাঠি, রড, পিস্তল, পেট্রোল বোমা, হাত বোমা, ছুরি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে। তারা এসেই ভাংচুর চালাতে শুরু করল, আমি কোনো রকমে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে নিজের আর পরিবারের প্রাণ বাঁচাতে পেরেছিলাম।"
দিল্লীর হিংসার নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ, তবে তার মধ্যে প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৪২ জনের, আহতের সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়েছে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই এখনো পর্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে এখনো পর্যন্ত প্রায় ৬৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় আরও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
Loading...