আজ খবর (বাংলা), নতুন দিল্লী, ০২/০১/২০২০ : চলতি বছরে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, প্রবল বৃষ্টিপাত, সামুদ্রিক পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দরুণ আগাম ক্ষয়ক্ষতির হিসাব, ঘূর্ণিঝড়ের আগাম শতর্কবার্তা প্রভৃতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সময় মতো সতর্ক ও পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বার্তা দেওয়া হয়েছে।
আন্দামান সাগর ও নিকটবর্তী এলাকায় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘পাবুক’ সম্পর্কে; দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ ও সমুদ্র লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের কয়েকটি জেলাকে; উত্তর-পূর্ব ও সংলগ্ন মধ্য-পূর্ব আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বায়ু সম্পর্কে; উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ সম্পর্কে ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলিকে এবং উত্তর-পশ্চিম ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও, পার্বত্য এলাকায় তুষারপাত, তুষারঝড় এবং পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সম্পর্কেও বিবরণ দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
আপৎকালীন পরিস্থিতি সম্পর্কিত তথ্যের যথাযথ প্রচার ও প্রকাশ সহ বিপর্যয় সম্পর্কিত সতর্কবার্তা সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে জানাতে এবং মৎস্যজীবীদের কাছে সম্ভাব্য মৎস্য শিকার এলাকা সম্পর্কিত তথ্য সহ মহাসাগর লাগোয়া রাজ্যগুলির কাছে আবহাওয়ার বার্তা পৌঁছে দিতে সরকার গত ৯ অক্টোবর দিক-নির্দেশক ও তথ্য সরবরাহ সংক্রান্ত ‘জেমিনি’ ব্যবস্থার সূচনা করেছে। সমুদ্রে দিক-নির্দেশের ক্ষেত্রে এটি এমন এক ব্যবস্থা, যার ফলে মৎস্যজীবীরা আগাম সতর্ক হতে পারবেন এবং সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কেও আগাম জানতে পারবেন। ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের অধীন স্বশাসিত সংস্থা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান ইনফরমেশন সার্ভিস উপগ্রহ-ভিত্তিক এই ব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। মহাকাশে ভূ-সমালয় কক্ষপথে ভারতের যে তিনটি কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে, সেগুলিকে মৎস্যজীবীদের কাছে আগাম তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে। সমগ্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মৎস্যজীবীরা উপগ্রহ-ভিত্তিক ‘জেমিনি’ ব্যবস্থার সাহায্যে লাভবান হবেন।
কুম্ভমেলার সময় প্রয়াগরাজে আগত লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বার্থে সরকার গত ১৪ জানুয়ারি আবহাওয়া সংক্রান্ত বার্তা পৌঁছে দিতে বিশেষ পরিষেবার সূচনা করে। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলা আয়োজিত হয়। আবহাওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য, যেমন – তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ও বায়ুপ্রবাহের বার্তা লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর কাছে পৌঁছে দিতে কুম্ভমেলা ওয়েদার সার্ভিস নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করে।
কৃষকদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কৃষি – আবহাওয়া ক্ষেত্রে বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে নতুন দিল্লিতে তিন দিনের এক্ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের ১১ই ফেব্রুয়ারি এই সম্মেলন আয়োজিত হয়। সম্মেলনে উপস্থিত গবেষক, নীতি-প্রণেতা, শিল্প সংস্থার প্রতিনিধি, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্যরা কৃষকদের স্বার্থে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় এক রূপরেখা তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন।
উপ-রাষ্ট্রপতি শ্রী এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু গত বছরের তেসরা নভেম্বর চেন্নাইতে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ওশন টেকনোলজির রজত জয়ন্তী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবগুলি থেকে উপকূলীয় এলাকাগুলির সুরক্ষার জন্য প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, সমাজের সার্বিক কল্যাণে উপকূল অঞ্চলের পরিবেশ-বান্ধব পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৯৩ সালে স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠানটি ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের একটি স্বশাসিত সংস্থা। মহাসাগরীয় প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বিশ্বের অগ্রণী প্রতিষ্ঠানগুলির একটি হয়ে উঠেছে।
প্রিন্স চার্লস গত বছরের ১৩ই নভেম্বর ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর পরিদর্শনে আসেন। প্রিন্স চার্লসের সফরকালে দপ্তরের সচিব এবং আবহাওয়া বিভাগের মহানির্দেশক তাঁকে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা সংক্রান্ত পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেন। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা সম্পর্কিত আধুনিক পদ্ধতি কাজে লাগানোর ফলে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলিতে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা কমানো সম্ভব হয়েছে। ভারত ছাড়াও বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর অঞ্চলের ১৩টি দেশ আগাম সতর্কতা সংক্রান্ত এ ধরণের পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে থাকে। এর ফলে, ঐ দেশগুলিতেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে জীবনহানির সংখ্যা ১০০-র মধ্যে রাখা সম্ভব হয়েছে। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোন ফণী সম্পর্কে প্রায় নিখুঁত সতর্কবার্তা দেওয়ার জন্য প্রিন্স চার্লস ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের প্রশংসা করেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সম্পর্কেও আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবার্তা অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞান ক্ষেত্রে ভারত ও গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে গত বছরের ২৮শে জানুয়ারি একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই মউ স্বাক্ষরের ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞান সম্পর্কে দুই দেশের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ভারত ও আর্জেন্টিনার মধ্যে কুমেরু অঞ্চলে সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে কুমেরু অঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-ভিত্তিক সহযোগিতা গড়ে উঠবে।
Loading...