![]() |
ড: প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি |
আজ খবর, হায়দ্রাবাদ, ০১/১২/২০১৯ : চারজন মিলে ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছিল পশু চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা রেড্ডিকে, তারপর তাঁর দেহ জ্বলিয়ে দেয় তারা। গত বুধবার এই নারকীয় ঘটনাটি ঘটেছিল হায়দ্রাবাদের একটি টোল প্লাজার কাছে। সেদিন ডক্টর প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি একটি ক্লিনিক থেকে বাড়িতে ফিরে আসার পর গিয়েছিলেন আর একটি ক্লিনিকে। কোল্লুরু গ্রামে তিনি পশুচিকিত্সার কাজ করতেন। বুধবার সন্ধ্যেবেলায় প্রিয়াঙ্কা শংসাবাদ টোল প্লাজার কাছে নিজের স্কুটি পার্ক করেন, তারপর সেখান থেকে একটি ক্যাব ভাড়া করে চলে যান একটি ক্লিনিকে।
ক্লিনিক থেকে প্রিয়াঙ্কা ঐ টোল প্লাজার পার্কিং লটে ফেরেন রাত্রি ৯টা ১৮ মিনিটে। ঐ টোল প্লাজার অদূরেই দুই ট্রাক ড্রাইভার ও দুই খালাসি মদ্যপান করছিল, তারা প্রিয়াঙ্কাকে স্কুটি পার্কিং করার সময়ে দেখে রাখে, পার্কিং করে প্রিয়াঙ্কা চলে গেলে ঐ চারজনের মধ্যে একজন (জললু নবীন) প্রিয়াঙ্কার স্কুটির চাকা থেকে হাওয়া বের করে দেয়; ঘটনাস্থলে ফিরে প্রিয়াঙ্কা দেখেন তাঁর স্কুটির চাকায় হাওয়া নেই; এই সময় তাঁকে সাহায্য করার অছিলায় ঐ চার মূর্তি তাঁর কাছে হাজির হয়; তাদের মধ্যে আর একজন (জললু শিবা) ডক্টর রেড্ডির স্কুটিটি নিয়ে সারানোর অছিলায় নিয়ে চলে যায়;
![]() |
ঘটনায় ধৃত চারজন |
এর মধ্যেই প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি তাঁর ছোট বোনকে বাড়িতে ফোন করে পুরো ঘটনাটি জানান এবং তাকে বলেন যতক্ষন না ঐ লোকটি তাঁর স্কুটি নিয়ে ফিরে আসছে সে যেন তাঁর সাথে কথা চালিয়ে যায়, কেননা উপস্থিত তিনজনকে প্রিয়াঙ্কার একটুও ভাল লাগছে না; এরপরেই চতুর্থ লোকটি ফিরে এসে জানায় যে সব দোকান বন্ধ তাই স্কুটি সারানো যায়নি। প্রিয়াঙ্কার বোনের বক্তব্য ছিল, তাঁর দিদির সাথে ফোনে কথা বলার সময় (রাত্রি ৯:২২) ফোনটা কেটে গিয়েছিল, কিছুক্ষন পর (রাত্রি ৯:৪৪)আবার প্রিয়াঙ্কার মোবাইলে ফোন করা হলে সেটির সুইচ অফ ছিল; তারপর থেকে আর প্রিয়াঙ্কার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তাঁর পরিবার। ছোট বোন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েও কোনো সন্ধান করতে পারেনি তার দিদির। রাত্রি ৩টের সময় পুলিশে নিখোঁজ ডায়রি করা হয়, ভোর ৫টা পর্যন্ত এলাকার সব স্কুটার সারাইয়ের দোকানে খোঁজ করেছিল পুলিশ।
তার কয়েক ঘন্টা পর সকালে টোল প্লাজা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সাদনগরের চাটানপল্লী ব্রিজের কাছ থেকে উদ্ধার হয় প্রিয়াঙ্কার মৃতদেহ। পুলিশ জানায়, চারজন মিলে তাঁকে ধর্ষণ করেছে, সেই সময় শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর, তারপরে প্রমান লোপাটের জন্যে তাঁকে জ্বালিয়ে এখানে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল। মৃতদেহ উদ্ধারের সময় শরীরের একটি অংশ ছিল ভস্মীভূত।এই ঘটনায় পুলিশ চারজনকেই গ্রেপ্তার করেছে, তারা হল মহম্মদ আরিফ (ড্রাইভার), জললু শিবা (ড্রাইভার), জললু নবীন (খালাসি) ও চেননাকেসভূলু (খালাসি); সাইবেরাবাদ থানার পুলিশ এই চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে নারায়নপেট থেকে।টোল প্লাজা অঞ্চলের সিসিটিচির ফুটেজও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
![]() |
প্রিয়াঙ্কাকে যে অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল |
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই গোটা দেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়; দেশের সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে; গর্জে ওঠেন আপামর ভারতবাসী। এমনকি কলকাতাতেও প্রতিবাদে মুখর হয়ে মোমবাতি মিছিল বের করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ঘটনার নিন্দায় মুখর হয়েছেন নেটিজেনরা। তেলেঙ্গানা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেহমুদ আলী প্রথমে মন্তব্য করেছিলেন, 'যদি মেয়েটি বিপদের সময় বোনকে ফোন না করে পুলিশকে ফোন করতেন তাহলে হয়ত এই ঘটনা ঘটত না', তাঁর এই মন্তব্যের জন্যেও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন মেহমুদ আলী; অবস্থার গুরুত্ব বুঝে তিনি পরে বলেন, "প্রিয়াঙ্কা আমার্ মেয়ের মত," যাই হোক, তেলেঙ্গানা প্রশাসন শক্ত হাতে গোটা তদন্তটি করছে, প্রথমে এই ঘটনার ডায়রি নিতে পুলিশ গড়িমসি করায় তিনজন অফিসারকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের সপক্ষে কোনো উকিল কাজ করতে রাজি নয় বলে জানা গেছে।
![]() |
কলকাতায় প্রতিবাদ |
দেশের মানুষ চাইছে, যত শীঘ্র সম্ভব, কঠোর হাতে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক; পশ্চিমবঙ্গে পুলিশকে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে, যাতে এখানে এরকম কোনো ঘটনা না ঘটে. আক্রান্ত মহিলারা বিপদে পড়লেই যাতে পুলিশ তাঁদের পাশে দাঁড়ায়, তার জন্যে সুনির্দিষ্ট আদেশ দেওয়া হয়েছে থানাগুলিকে।আজ এই ঘটনায় সকালে বহু মানুষ জড়ো হয়েছেন প্রিয়াঙ্কার বাড়ির সামনে, তাঁরা দোষীদের ফাঁসির দাবিতে মুখর হয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলিও এই ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন।
Loading...