আজ খবর, নয়া দিল্লী, ০৯/১১/২০১৯ : অযোধ্যার রাম মন্দির - বাবরি মসজিদ বিতর্ক বহু পুরোন। দীর্ঘদিন ধরে এই বিতর্ক চলে আসছে, ভারতের ইতিহাসের পাতায় স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছিল এই বিতর্ক। কিন্তু এবার যবনিকা পড়তে চলেছে শতাব্দী প্রাচীন এই বিতর্কের, কেননা একটানা বিচার ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই আজ দেশের সর্বোচ্য আদালত, সুপ্রিম কোর্ট আজ রায় দিল এই মামলার। দেশের সর্বোচ্য আদালত আজ জানিয়ে দিল যে বিতর্কিত জমিটি রামলালার। সেখানে তৈরি হবে রাম মন্দির। কিন্তু কোন সময়ে কিভাবে এই বিতর্কের সূত্রপাত, আসুন সেটাই দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
অযোধ্যা উত্তরপ্রদেশে সরযূ নদীর ধারে অবস্থিত। ১৫২৮ সালে অযোধ্যায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন মুঘল সম্রাট বাবর।স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, ঠিক সেখানেই মুঘল সম্রাট বাবর মসজিদ তৈরি করেছিলেন, যেখানে একসময় ছিল শ্রী রামচন্দ্রের জন্মস্থান। সেখানে হিন্দুদের মন্দির ভেঙেই বাবর মসজিদ তৈরি করেছিলেন, এমনটাই দাবি করেন তাঁরা। ১৬১১ সালে দিল্লীর মসনদে যখন জাহাঙ্গীর সেই সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক ব্যবসায়ী উইলিয়াম ফিঞ্চ ভারতে এসেছিলেন, তিনি এটা নথিবদ্ধ করেন যে এই জায়গায় শ্রীরামচন্দ্রের প্রাসাদ দর্শন করতে আসেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তেরা। ১৭১৭ সালে রাজস্থানের রাজা জয় সিংহ ২ বিতর্কিত জমিটি কিনে নেন, শ্রীরামের মূর্তি সেখান থেকে বের করে আনা হয়; ১৭৬৮ সালে খ্রিস্টান যাজক স্টিফেন টিফেনথালের সাক্ষ্য দিয়ে বলেন ঔরংজেব এই মসজিদ তৈরি করেন, কেউ কেউ তখন বলেন বাবর এই মসজিদ তৈরি করেছিলেন। ১৮৫৯ সালে ইংরেজরা বিতর্কিত জমিটিকে পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেয়। ১৯৪৯ সালে ডিসেম্বর মাসে ঐ বিতর্কিত জায়গায় আবার মূর্তি স্থাপন করা হয়.; হিন্দু মুসলিম দুই পক্ষের তরফে এই বিতর্ক নিয়ে মামলা করা হয়; ইংরেজরা পাঁচিল ঘেরা চত্বর তালা বন্ধ করে দেয়।
১৯৬১ সালে স্বাধীন ভারতে একটি মামলা হয়, যেখানে বলা হয় যে বাবরি মসজিদে জোর করেই বিগ্রহ স্থাপন করা হয়েছিল।১৯৮৪ সালে বিতর্কিত জায়গায় রাম জন্মভূমি নিয়ে আন্দোলন গড়ে ওঠে; ১৯৮৬ সালে আদালতের নির্দেশে বিতর্কিত জায়গায় গেট খুলে দেওয়া হয়, যাতে হিন্দুরাও পূজা দিতে পারেন। ১৯৮৯ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বিতর্কিত স্থানে রাম জন্মভূমির প্রামাণ্য হিসেবে একটি শিলা স্থাপন করে, যা নিয়ে ভাগলপুর সহ বেশ কিছু জায়গায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৯০ সালে লাল কৃষ্ণ আদবানির নেতৃত্বে ভারত জুড়ে রাম মন্দির নির্মাণের ডাক দেওয়া হয় এবং দেশ জুড়ে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়; বিহারে আডবানীকে গ্রেপ্তার করা হয়, অযোধ্যায় পুলিশ গুলি চালায়, অনেকে মারা যান, যাঁদের দেহগুলি ফেলে দেওয়া হয় সরযূ নদীতে। ১৯৯১ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের আদেশে বিতর্কিত স্থানে কোনো রকম স্থায়ী নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়; ১৯৯২ সালে বিতর্কিত জায়গায় প্রবেশ সহজ করে দেন কল্যাণ সিংহ , এরপর অযোধ্যায় করসেবকদের জমায়েত বাড়তে থাকে।
১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর করসেবকরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়। এরপর ঐ বিতর্কিত জমি নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। এবছর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এই মামলার সমাধান করতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন আর আজ শেষ পর্যন্ত ৫০০ বছরের বিতর্কের সমাধান হল আজ।
সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় দিয়েছে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিটি দেওয়া হবে রামলালা পক্ষকেই, মুসলিমদের দেওয়া হবে বিকল্প জমি; তবে এই মামলায়ই আর এক পক্ষ নির্মোহী আখড়া , যারা সেখানে পূজা করার অধিকার জানিয়ে এসেছিল, তাদের দাবি খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৩ মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট বানিয়ে মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছে। সুতরাং অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে নির্মাণ হবে রাম মন্দির।
Loading...